প্রকৃতি-পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে প্রকৃতির ঐশ্বরিক সৌন্দর্য উপভোগ, উপলব্ধি ও অধ্যয়ন করাই ইকো ট্যুরিজম। ইকো ট্যুরিজম বা পরিবেশগত পর্যটনের মাধ্যমে প্রকৃতিকে গভীরভাবে জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই সময়ে ইকো ট্যুরিজমের ধারণা দেশ-বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। কক্সবাজার শহরে পরিবেশ বিধ্বংসী শত শত দালানের ভিড়ে মারমেইড বিচ রিসোর্ট যেন কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার ইকো ট্যুরিজমের হাতছানি দিচ্ছে।রিসোর্টটি নতুন করে পর্যটক টানছে মনোমুগ্ধকর লাল কাঁকড়া আর কাছিমের ভাস্কর্য।
কক্সবাজার মেরিনড্রাইভের রেজুখাল ব্রীজের পাশেই কাঠ, বাঁশ, ছন দিয়ে তৈরি অনিন্দ্য সুন্দর এ রিসোর্ট। ইট কংক্রিটের শত শত দালানের ভিড়ে প্রকৃতির নিখাদ সৌন্দর্যের সারথি পরিবেশ বান্ধব এ রিসোর্টটি গড়ে তুলেছিলেন আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ। ২০০৯ সালে রেজুখাল ব্রীজ সংলগ্ন পেঁচারদ্বীপে এ রিসোর্টটি গড়ে তোলা হয়। সম্পুর্ণ পরিবেশ বান্ধব ইকো রিসোর্ট স্থাপনের জন্য বাংলাদেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে ২০১১ সালে লন্ডন আ্যওয়ার্ড পান স্বত্বাধিকারী আনিসুল হক চৌধুরী সোহাগ।
মারমেইড কর্তৃপক্ষ জানান, ২০০৫ সালে কক্সবাজারের কলাতলীতে মিউজিক এন্ড সী-ফুড ক্যাফে নামে এর যাত্রা। পরে গ্রাহকদের উত্তরোত্তর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়া এবং এতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পার্শবর্তী আরেকটি স্থানে নাম পরিবর্তন করে এ রিসোর্ট গড়ে তোলা হয়।
সর্বোচ্চ ৩০ ফিট উচ্চতায় নির্মিত এ রিসোর্টে গাছের ফাঁকে ফাঁকে নির্মল পরিবেশে মাটি, কাঠ, বাঁশ, ছন দিয়ে ছোট ছোট ২৫টি কক্ষ রয়েছে এতে। পরিবেশ বান্ধব নির্মল পরিবেশের এ ইকো রিসোর্ট ও রেস্টুরেন্টে পরিবেশিত সী-ফুড সহ উন্নতমানের খাবার অল্পদিনে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
বৃদ্ধি পায় দেশি-বিদেশী পর্যটকের চাহিদা। এতে ২০১৩ সালে পেঁচারদ্বীপে যাত্রা শুরু করেন ‘মারমেইড বীচ রিসোর্ট’ নামে আরেকটি রিসোর্ট। এ রিসোর্টে রয়েছে ৩৫টি কক্ষ, সুইমিংপুল ও সু-পরিসর রেস্টুরেন্ট। ১৫০ থেকে ২৫০ জন একসাথে বসে খাবার গ্রহনের সু ব্যাবস্থা রয়েছে রিসোর্টটিতে।
সাগরের কাছিম ও লাল কাঁকড়া রক্ষার সচেতনতায় রিসোর্টটিতে নির্মিত হয়েছে লাল কাঁকড়া ও কাছিমের ভাস্কর্য। ভাস্কর্য দুটির পাশে রয়েছে বালিয়াড়ি রক্ষার সাগরলতা। এ ছাড়াও পেঁচারদ্বীপে মারমেইড ক্যাফে ও ব্যাংককিয়ান (অথেনটিক থাইফুড) নামে আরো ২টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
পরিবেশের উপকারী এ অনিন্দ্য সুন্দর সামুদ্রিক প্রাণী লাল কাঁকড়া ও কাছিম রক্ষায় সচেতনতার জন্য এ দুটি ভাস্কর্য নির্মান করা হয় জানিয়ে মারমেইড কর্তৃপক্ষ বলেন, সামুদ্রিক প্রাণীকুলের বিস্ময়কর এবং অদ্ভুত সুন্দর লাল কাঁকড়া ও কাছিম প্রাকৃতিকভাবে খুবই উপকারি। কাছিম সমুদ্রে ময়লা আবর্জনা ভক্ষণ করে পরিচ্ছন্ন রাখে। কাছিম হাজার মাইল দুর থেকে কক্সবাজারের সমুদ্র উপকুলের বালিয়াড়িতে এসে ডিম পাড়ে। সামুদ্রিক কাছিম ২০০ মিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় ধরে সমুদ্রে বাস করছে সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে। অতি প্রাচীন এ প্রাণীর অনেক প্রজাতিই এখন বিলুপ্তির পথে।
অপরদিকে সাগরপাড়ের বালিয়াড়িতে লাল কাঁকড়ার বসবাস। সৈকতে মনোমুগ্ধকর আলপনা আঁকেন কাঁকড়ার দল। যেন অবচেতন মনের কোনো শিল্পীর ক্যানভাস সদৃশ এ দৃশ্য। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তে সৈকতে ঝাঁকে-ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার সমাহার অনিন্দ্য সৌন্দর্য মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলে পর্যটকদের। এ লাল কাঁকড়া বিশ্বের দ্বীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতের আরেকটি ঐতিহ্য। জোয়ারের পানিতে বালিয়াড়িতে ভেসে আসা সামুদ্রিক মরা প্রাণী ভক্ষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছে লাল কাঁকড়া।
মারমেইড রিসোর্টে ৩০০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ২৭০ জন স্থানীয় জনশক্তি কাজ করেন জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মারমেইড রট, সিমেন্ট, ইট দিয়ে স্থাপনা না করে মাটি, কাঠ, বাঁশ, ছন দিয়ে কুঁড়ে ঘর ধরনের কক্ষ (ইকো রিসোর্ট) তৈরী করা হয়েছে। প্রতিটি কক্ষের চারপাশে দেশিয় নানা প্রজাতির গাছ রোপন করা হয়েছে। সম্পুর্ণ পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের স্থান এখন মারমেইড। মারমেইড এ স্থানীয় জনশক্তিকে কাজে নিযুক্ত ও স্থানীয় মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনে নানা ভুমিকা রেখে আসছেন। এমনকি মানবিক সহায়তাও অব্যাহত রাখা হয়েছে।
৪ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
১৩ দিন ৮ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
১৫ দিন ৮ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
১৯ দিন ১০ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
১৯ দিন ১০ ঘন্টা ২৯ মিনিট আগে
৩৪ দিন ২১ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
৩৭ দিন ৯ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
৩৭ দিন ১০ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে