মোঃ আজগার আলী, সদর উপজেলা সাতক্ষীরা:
স্বাধীনতার ৫২ বছর পেরিয়ে গেলেও সাতক্ষীরার গণকবর ও বধ্যভূমি আজও সংরক্ষণ করা হয়নি। সাতক্ষীরা শহরের আশেপাশের কোন গণকবর ও বধ্যভূমিতে নেই স্মৃতিসৌধ। আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে বধ্যভূমি সংরক্ষণে তালিকা করলেও সাতক্ষীরায় কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। অযত্ন পড়ে থাকা এসব বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো সরকারিভাবে সংরক্ষণ না করায় চলে গেছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দখলে। তাই বধ্যভূমিগুলোর ইতিহাস নতুন প্রজম্মের কাছে রয়ে গেছে অস্পষ্ট। সংরক্ষণের উদ্যোগ না নেওয়ায় সাতক্ষীরায় বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো একে একে হারিয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরগুলোও রয়েছে অরক্ষিত। সেখানে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়নি। অনেকের কবর বনজঙ্গলে ঢেকে গেছে। দৃশ্যমানও করা হয়নি এসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর।
সাতক্ষীরা শহরের পার্শ্ববর্তী এলাকার মধ্যেই রয়েছে পাঁচটি গণকবর। জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আরও অনেক বধ্যভূমি। হত্যাযজ্ঞের চিহ্ন হিসেবে স্বাধীনতার পর এসব বধ্যভূমি ও গণকবর থেকে শতশত মানুষের মাথার খুলি, হাড় ও কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়।
গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান বাবু বলেন, ১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল খুলনা, বাগেরহাট, ৯৬ গ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৬০০-৭০০ নির্যাতিত মানুষ ভারতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাতক্ষীরা আসেন। তারা বর্তমান সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেন। পরদিন সন্ধ্যায় হানাদার বাহিনী স্কুলের পেছনে দীনেশ কর্মকারের বাড়িতে গিয়ে তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করে। যেসব মানুষকে হত্যা করা হয় সেই সব মানুষকে দিয়ে গর্ত খোড়া হয়। তাদের পিছনে গুলি খরচ না করে বন্ধুকের বেউনেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে এবং বটি দিয়ে জবেহ করা হয়। তবে বর্তমানে ওই স্থানে বধ্যভূমির কোনও চিহ্ন নেই। দীনেশ কর্মকার তার পৈত্রিক জমি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছেন। এই পুকুর ও ডোবার অংশটুকু দখলদারদের হাতে চলে গেছে। এখন সেখানে ভবন নির্মাণ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের কাছে জেলার সকল গণকবর ও বধ্যভূমি দ্রুত সংরক্ষণের দাবী করেন তিনি।
জানা যায়, সদরের ঝাউডাঙ্গায় বিজয়ের কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতে যাওয়ার পথে গুলি করে হত্যা করা হয় শতশত বাঙালি নারী-পুরুষ ও শিশুকে। পরে তাদের গোবিন্দকাটি খালপাড় ও রূপালী ব্যাংকের পেছনে গণকবর দেওয়া হয়। এসব গণকবরেরও কোনো চিহ্ন নেই।
সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের বাঁকাল ব্রিজ ছিল হানাদার বাহিনীর আরেকটি হত্যাযজ্ঞের স্থান। মুক্তিকামী বাঙ্গালীদের গুলি করে অথবা জবাই করে ব্রিজের নিচে ফেলে দেওয়া হতো। এটিও বর্তমানে প্রভাবশালীদের দখলে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ভাড়খালী-মাহমুদপুর স্কুলের পেছনের পুকুর থেকে স্বাধীনতার পর উদ্ধার করা হয় কয়েকশ’ মানুষের কঙ্কাল ও মাথার খুলি। সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় বৃহৎ গণকবর ছিল এটি। তবে এখন এর কোনও অস্তিত্ব নেই।
মুক্তিযোদ্ধা সুভাষ সরকার জানান, বিজয়ের পর সদর উপজেলার ভাড়ুখালী-মাহমুদপুর স্কুলের পেছনের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয় কয়েক শ’ মানুষের কঙ্কাল ও খুলি। এটি সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় বৃহৎ গণকবর হিসেবে চিহ্নিত হলেও এখন এর কোনো অস্তিত্ব নেই।
তিনি আরও বলেন, সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের পেছনে বধ্যভূমি রয়েছে। স্বাধীনতার ৫২ বছরেও বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ করা হয়নি। অনেকে সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করে। বধ্যভূমিটি সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি।
মুক্তিযোদ্ধা হাসনে জাহিদ জজ বলেন, সাতক্ষীরার সব গণকবর ও বধ্যভূমি সংরক্ষণ করার জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে দপ্তরে ঘুরেছি কোন কাজ হয়নি। গণকবর ও বধ্যভূমি সংরক্ষণ না হওয়া আমাদের জন্য খুবই বেদনার।
১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাটকেলঘাটার সন্নিকটে পারকুমিরা এলাকায় ৭৯জন গ্রামবাসীকে পাকসেনারা সেদিন ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। এরমধ্যে ৪৯জনের লাশ পারকুমিরার বধ্যভূমিতে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়।
স্বাধীনতার ৫২ অতিবাহিত হলেও আজও সেই বীর শহীদদের গণকবর ও ঘরগুলি সংরক্ষণে সরকারিভাবে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯২ সালের ৪ মে কাশীপুর বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় পারকুমিরা বধ্যভূমির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু আজও এই বধ্যভূমিতে শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
জানা যায়, পাটকেলঘাটা থেকে হায়নারা পারকুমিরায় গিয়ে নিরীহ গ্রামবাসীকে আলোচনার কথা বলে একত্রিত করে পারকুমিরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনে। সেখানে নির্মমভাবে তাদের ওপর ব্রাশ ফায়ার করে ৭৯জনকে হত্যা করা হয়। যাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি তাদেরকে পারকুমিরার বধ্যভূমিতে গণকবর দেয়া হয়। ’
সাতক্ষীরা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোশাররফ হোসেন মশু বলেন, দেশ স্বাধীনের ৫২বছর পরেও সাতক্ষীরার বধ্যভূমিগুলো রয়ে গেছে অসংরক্ষিত। সাতক্ষীরার গণকবর ও বধ্যভূমি আজও সংরক্ষণে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত দিয়েছি, সভা মিছিল মিটিং করেছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবী জানাচ্ছি সাতক্ষীরার গণকবর ও বধ্যভূমি সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী সমস্ত বীর সেনাদের আজীবন স্মরণীয় করে রাখতে সমস্ত বধ্যভূমিগুলো সংস্কার করার দাবি জানিয়েছেন সাতক্ষীরার বীর সন্তানরা।
১৬ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
৩ দিন ১ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে
৩ দিন ১ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
৩ দিন ১ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
৩ দিন ১ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
৩ দিন ১১ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৩ দিন ১২ ঘন্টা ৬ মিনিট আগে
৩ দিন ১২ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে