গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অপব্যবহার দেশের সাংবাদিকতার অন্যতম সংকট‌: প্রেস সচিব বসুন্ধরা শুভ সংঘ জামালপুর জেলার নেতৃত্বে জাবিপ্রবির জসিম ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হোক মুসলমানদের জীবনে- মাসুদ উদ্দিন সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী অন্তর্ভুক্ত হলেন চাটখিলের কৃতি সন্তান এডভোকেট শামিম পাটোয়ারী ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হোক মুসলমানদের জীবনে- বাহার উদ্দিন শার্শায় দূর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত,আহত,,১ বন্ধ ক্যাম্পাসে অবহেলিত প্রাণীদের পাশে ববি'র শিক্ষার্থীরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঈদ সামগ্রী বিতরণ আদমদীঘির কাঞ্চনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটিকে সংবর্ধনা গোয়ালন্দে অবৈধ মাটি কাটায় যুবককে ৬ মাসের কারাদণ্ড বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা মামলার আসামিকে ছেরে দেওয়ার ঘটনায় বিভিন্ন দৈনিক প্রত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ শৈলকুপা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলের মতবিনিময় আদমদীঘিতে চোলাই মদ বিক্রেতা দুই জনের জেল-জরিমানা বগুড়া শাজাহানপুরে রাণীরহাট গবাদিপশুর হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়, জরিমানা ৫০ হাজার টাকা ! লালপুরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালন, নালিতাবাড়ীতে কারিতাসের আয়োজনে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন শেরপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে কথিত সাংবাদিক নোমান গ্রেফতার গোয়ালন্দে ভেজাল দই ও ললিপপ তৈরির দায়ে এক ব্যক্তিকে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড মোংলা-ঘাষিয়াখালী এলাকায় টেকসই বেড়ি বাঁধের দাবিতে মানববন্ধন শ্রীবরদীর কাকিলাকুড়া ইউনিয়নে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন

ফের আলোচনায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

দেশচিত্র নিউজ ডেস্ক

প্রকাশের সময়: 17-04-2023 02:49:11 pm

গত ১৪ মার্চ ‘দুবাই ফেরত চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী বাবর বাহিনীর দাপট, শাহ আলম সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি রেল’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক যুগান্তর। বিশেষ প্রতিনিধি মাহবুব আলম লাবলু তার প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ারও করেন। প্রতিবেদনে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক উপ-অর্থ সম্পাদক হেলাল আকবর বাবরকে চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ, দখলবাজ ও সন্ত্রাসীদের গডফাদার বলে উল্লেখ করেন তিনি। পরে ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাইবার ট্রাইব্যুনালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন বাবর। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আদেশ দেন।


গত ২ এপ্রিল দৈনিক কালবেলায় ‘ধনসম্পদের সিপাহসালার কাস্টমসের দুই সিপাহি’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। দৈনিকটির বিশেষ প্রতিনিধি ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সহ-সভাপতি দীপু সারোয়ারের প্রতিবেদনে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের দুই সিপাহি মনোয়ার হোসেন এবং মিনু রহমানের অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও হাসপাতাল ব্যবসার বিষয়টি উঠে আসে। এই সংবাদের দুদিন পর ৪ এপ্রিল ফোন দিয়ে মনোয়ার হোসেন পরিচয়ে এক ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার হুমকি দেন।


সাংবাদিকদের ওপর এ ধরনের মামলা, হুমকি, হয়রানি বিষয়ে ভুক্তভোগী মাহবুব আলম লাবলু জাগো নিউজকে বলেন, সাংবাদিকদের ভয়-ভীতি ও হয়রানি করতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পরও একজন দাগি আসামি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের আশ্রয় নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আইনটি যখন করা হয় তখন থেকেই সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এর বিরোধিতা করেছিল। কারণ এটি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা হতে পারে, সেই ধারণা থেকেই।


সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহকারী সাংবাদিকদের নির্যাতন, আল-জাজিরার লন্ডনভিত্তিক সাংবাদিকের ভাইয়ের ওপর হামলা, ঢাকা ট্রিবিউনের আলোকচিত্রীর ওপর হামলা এবং প্রথম আলোর সাংবাদিক আটক, গুলশানের বহুতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ সংগ্রহকালে দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিক জহিরুল ইসলামকে শারীরিকভাবে আঘাত ও লাঞ্ছনা, দীপ্ত টিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধি রঘুনাথ খাঁ-কে সাতক্ষীরা বড়বাজার সড়কের ডে নাইট কলেজ মোড় থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার পরিচয়ে তুলে নিয়ে পরে আটক করাসহ সারাদেশে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমন মামলা, হামলাসহ নানা ধরনের হয়রানি, হুমকি বেড়েই চলেছে।


আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে, চলতি বছরের গত তিন মাসে ৫৬ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন।


সংস্থাটির পরিচালক (কর্মসূচি) নীনা গোস্বামী জাগো নিউজকে বলেন, সাংবাদিকরা সমাজের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তাদের সমাজের একটা কণ্ঠ মনে করা হয়। সাংবাদিকদের হয়রানিকে পৃথিবীর কোথাও ভালোভাবে দেখা হয় না। হলুদ সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে বিষয়টি ভিন্ন। কিন্তু সার্বিকভাবে সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছে।


‘সরকারের মদতেই নয়, অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তিও সাংবাদিককে হয়রানি বা মামলা করছে। আইনটাকে তারা ব্যবহার করছে। এ আইনটা বাতিল করতে হবে। এটিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যদিও আইনমন্ত্রী বলেছিলেন সাংবাদিকদের বেলায় এটা প্রয়োগ করা হবে না। কিন্তু বাস্তবে সেটার কোনো মিল দেখা যাচ্ছে না।’


সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে বলা যায়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করে। এ ধরনের পদক্ষেপ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচিত করছে ও সাংবাদিকদের পেশাগত জায়গায় ভীতি ও নিরাপত্তাহীনতার পরিবেশ তৈরি করছে।


এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, ক্ষমতাশালীরা সব সময়ই সাংবাদিকদের ব্যাপারে ভীত থাকে। সে কারণে সাংবাদিকদের সব সময় ভীতির মধ্যে রাখা, হুমকি দেওয়া। তাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতার জন্য সাংবাদিকসহ পুলিশ প্রশাসনকে তৎপর থাকতে হবে, যাতে স্বাধীনভাবে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপন করতে পারে। অনেকে আবার বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করে না।


শুরু থেকেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিক ও মুক্তচিন্তার মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় কোনো বাধা হবে না এবং সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আইনটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্কতা বজায় রাখার কথা বললেও তা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। সম্প্রতি সাংবাদিকদের হয়রানির ফলে নতুন করে আইনটি সংশোধনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে অধ্যাপক শফিউল আলম ভূইয়া জাগো নিউজকে বলেন, এ আইনটি থাকা দরকার। তবে আইনটাকে অপব্যবহার করে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই আইনটি সংশোধন করা দরকার, যারা জনস্বার্থে কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে। সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে আইনটি প্রেস কাউন্সিলের মাধ্যমে দেখা উচিত।


সাংবাদিক নেতারাও দ্রুতই আইনটি সংশোধন নয়, বরং বাতিল করার দাবি জানাচ্ছেন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সুহেল জাগো নিউজকে বলেন, সরকার বলে তারা সাংবাদিকবান্ধব সরকার। আমি মনে করি, আইনটি সাংবাদিকদের জন্য অপ-আইন। তাই আইনটি বাতিল করার জন্য সরকার পদক্ষেপ নেবে। আইনমন্ত্রীও প্রায়ই বলেন সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে না। কিন্তু প্রতিনিয়তই আমরা দেখি আইনটা সাংবাদিকদের ওপরই প্রয়োগ হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে মামলা, হুমকি, নির্যাতন সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।


সম্প্রতি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক আলোচনায় বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে অনেক সময় হয়রানির অভিযোগ উঠছে। প্রয়োজন হলে আইনের বিধি সংযুক্ত করা বা পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে এ বিষয়ে সুধীজনদের সঙ্গে আলোচনাও করা হয়েছে। তবে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের প্রয়োজনীয়তা আছে।

আরও খবর