ব্যাংক খাতের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ৯টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে আগেই। রবিবার সেই ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, অপর্যাপ্ত জামানত, অনিয়মের মাধ্যমে সৃষ্ট ঋণ, খেলাপি ঋণের আধিক্য, আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি দেখানসহ বিভিন্ন অনিয়ম জেঁকে বসেছে ব্যাংক খাতে। তাই এই উদ্যোগ নিয়েছেন গভর্নর।
সোনালী, রূপালী, জনতা, অগ্রণী, ওয়ান, ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পর্যবেক্ষকরা বোর্ড মিটিংয়ে নিজেদের মতামত উপস্থাপন করতে পারবেন। এ ছাড়া ন্যাশনাল, বাংলাদেশ কমার্স ও পদ্মা ব্যাংকে সমন্বয়ক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যারা সশরীরে ব্যাংকে যাবেন না। কিন্তু ব্যাংকের সর্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখবেন।
গত ৪ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেছিলেন, ‘ব্যাংক ব্যবস্থায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চিহ্নিত করতে চার চলকের ওপর ভিত্তি করে এ দফায় ১০টি দুর্বল ব্যাংক চিহ্নিত করা হয়েছে। চলকগুলো হচ্ছে শ্রেণিকৃত ঋণের মাত্রা, মূলধন পর্যাপ্ততা, ঋণ-আমানত অনুপাত এবং প্রভিশনের পরিমাণ। আমরা কোনো ব্যাংক বন্ধের পক্ষে না, আমানতকারীর টাকা যেন নিরাপদ থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে চাই। আমরা চাই সব ব্যাংক ব্যবসা করবে, লাভ করবে এবং বাজারে টিকে থাকবে।’
একশ্রেণির আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রেখে মানুষ টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, একশ্রেণির দুর্বল ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এমন পরিস্থিতি দাঁড়ায় কি না, এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গভর্নর বলেন, ‘এক শ্রেণির আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থা এসেছে। আমরা চাই ব্যাংকের প্রতি যাতে তা না আসে। সে জন্যই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কিছু কিছু ব্যাংকে নামে বেনামে নিজেদের মধ্যে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। আবার এসব ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ জামানত নেওয়ার কথা তা নেয়া হয়নি। যে পরিমাণ জামানত নেওয়া হয়েছে তার গুণগত মান খুবই দুর্বল। যেমন সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক ঘটনায় বন্ধকী সম্পদ হিসেবে যে পরিমাণ জমি দেখানো হয়েছিল তার বড় একটি অংশই ছিল সরকারি খাস জমি, ডোবা-নালা। অনেক ঋণই অনিয়মের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছে।
আবার এসব ঋণ বছরের পর বছর পরিশোধ করা হচ্ছে না। ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে ঋণ পরিশোধ দেখানো হচ্ছে। এভাবে খেলাপি ঋণ আড়াল হয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সম্প্রতি এক পরিদর্শনে এমন একটি নতুন প্রজন্মের ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির তথ্য উঠে এসেছে। নতুন প্রজন্মের অপর একটি ব্যাংক গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। ইতোমধ্যে ব্যাংকটি নাম পরিবর্তন করে নতুন নামে কার্যক্রম চলছে।
প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন সময় দেশের ১৫টি ব্যাংকে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা ও অন্যান্য ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক পর্যায়ের কর্মকর্তা পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
এর মধ্যে ২০১৫ সালে একসঙ্গে রাষ্ট্রমালিকানাধীন সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ কৃষি ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে পর্যবেক্ষক দেওয়া হয়। আইসিবি ব্যাংকে ১৯৯৪ সালে, ন্যাশনাল ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকে ২০০৪ সালে , রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকে ২০১৩ সালে, ইসলামী ব্যাংকে ২০১০ সালে, এনআরবি কমার্শিয়াল ও ফারমার্স ব্যাংকে (পদ্মা) ২০১৬ সালে এবং এবি ব্যাংকে ২০১৭ সালে পর্যবেক্ষক বসানো হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্টে পর্যবেক্ষক বসানো হয় ওয়ান ব্যাংকে।
৫ দিন ১৬ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
৬ দিন ১৬ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে
৭ দিন ৩ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
৮ দিন ১ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৯ দিন ৩০ মিনিট আগে
৯ দিন ১৯ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
১০ দিন ২১ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
১০ দিন ২১ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে