উগ্রবাদি সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধের দাবিসহ যেসব যে বার্তা দিয়েছেন বরুণার পীরসহ আলেমরা
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী শেখবাড়ি জামিয়া মাদরাসার বার্ষিক ইসলামী মহাসম্মেলন ও আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ইসলাহি জোড় শুক্রবার রাতে বিশেষ মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে।
দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করেন।
শুক্রবার রাতে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন আঞ্জুমানের আমীরে শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘‘ঐক্য মুসলমানদের বড় শক্তি। মুসলিম উম্মাহকে বিভক্তির পথ পরিহার করে ইসলামের পক্ষে এক হতে হবে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন শক্তি তাদের পরাজিত করতে পারবে না। ইসলামকে শক্তিশালী করতে আমাদের অহংকার, গর্ব এবং হিংসা পরিহার করে পীর-ওলামাদের নেতৃত্বে একত্রিত হতে হবে।’
বিশাল জামিয়া ময়দানে আয়োজিত এই সম্মেলনে কোরআন তিলাওয়াত, হাদিসের বাণী ও ইসলাহী বয়ান শোনার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে আগত হাজারো মুসল্লি শৃঙ্খলার মধ্যে অংশ নেন। সম্মেলনে প্রায় লক্ষাধিক মুসল্লি অংশ নেন। ভৈরবগঞ্জ বাজারের মহাসড়ক অবরুদ্ধ হয়ে যায় শত শত গাড়ির বহরের কারণে। বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও স্বেচ্ছাসেবক টিম মাঠে তৎপর ছিল। জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে ছিল অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প।
দুই দিনব্যাপী এই ইসলাহী সম্মেলনে বক্তৃতা প্রদান করেন—বরুণা মাদরাসার সদরে মুহতামিম হাফিজ মাওলানা সাইদুর রহমান বর্ণভী, বরুণা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ বদরুল আলম হামিদী, মাওলানা ওলিউর রহমান বর্ণভী, আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব, মাওলানা সিবগাতুল্লাহ নূর, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আব্দুস সবুর, মাওলানা আবদাল হোসেন খান, লেখক গবেষক মাওলানা মুসা আল হাফিজ, নুরুল কুরআন মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আহমদ বেলাল, মাওলানা রেজাউল করিম আবরার, শেখবাড়ি জামিয়ার ভাইস প্রিন্সিপাল হাফিজ মাওলানা শেখ আহমদ আফজল বর্ণভী, হাফিজ মাওলানা সাদ আমীন বর্ণভীসহ অর্ধশতাধিক দেশবরেণ্য উলামায়ে কেরাম ও ইসলামী চিন্তাবিদগণ।
মুনাজিরে জামান আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী বলেছেন, দাওয়াত ও তাবলিগের কাজ হককানি আলেম-উলামাদের তত্ত্বাবধানে চলবে।
মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, এদেশে উগ্রবাদি সংগঠন ইসকনকে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক দেশে ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো আইন হবে বলে সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।
সম্মেলনের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করেন শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী।
বিশেষ আয়োজন হিসেবে, জামিয়ার ছাত্ররা আরবি ও বাংলা দেয়ালিকা প্রকাশ এবং অন্যান্য সৃজনশীল কার্যক্রমে অংশ নেয়, যা সম্মেলনে আগত মুসল্লিদের কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সু-ব্যবস্থা ছিল উল্লেখযোগ্য।
শেখবাড়ি জামিয়ার ইসলাহী জোড় ও সম্মেলন মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং ইসলামের পক্ষে আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়ার শক্তিশালী বার্তা দিয়েছে।
সিলেট বিভাগের বরেণ্য বুজুর্গ, শায়খুল আরব ওয়াল আজম মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানি (রহ.) এর খলিফা, আল্লামা শায়খ লুৎফুর রহমান বর্ণভীর (রহ.) এর দোয়ার ফসল শেখবাড়ি জামিয়া।
প্রসঙ্গত, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বাংলার খ্যাতিমান বুযুর্গ খলীফায়ে মাদানী কুতবে দাওরান হযরত লুৎফুর রহমান বর্ণভী (পীর সাহেব বরুণা) সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকে প্রায় ৯ দশক ধরে ইসলাহী এ সংগঠন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান এবং বর্তমান বাংলাদেশে মানবতার কল্যাণ, মুসলমানদের দ্বীন-ঈমানের সংরক্ষণ ও মানবিক মূল্যবোধের উজ্জীবনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
১২ ঘন্টা ৩৫ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে