জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলায় একটি গরু চুরি করে কসাই গোস্ত বিক্রি করেছিলো স্থানীয় বিএনপির এক নেতার কাছে। অভিযুক্ত কসাইয়ের নাম বজলু প্রমানিক। তার বাড়ি উপজেলার আদারভিটা ইউনিয়নে। গোস্ত ক্রয়কারীর নাম মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী। তিনি আদারভিটা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। তাঁর বাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ কয়ড়া গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জানুয়ারি দুপুরে উপজেলার জোনাইল রাইসিয়া ছাহাতরু বালিকা দাখিল মাদ্রাসা মাঠে উপজেলা ও পৌর জাতীয়তাবাদী মহিলা দল নারী সমাবেশের আয়োজন করে। ওই সমাবেশে অংশ নেওয়া কর্মী-সমর্থকদের জন্য নিজ বসতবাড়িতে ভূরিভোজের আয়োজন করেন বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রী জেলা মহিলা দলের অর্থ ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদিকা লায়লা খাতুন ইতি।
ওই ভোজের জন্য গত ৭ জানুয়ারি মাহমুদুল হাসান মুক্তা চৌধুরী কয়ড়া বাজারের গোস্ত ব্যবসায়ী বজলু প্রমানিককে ৬ শত টাকা কেজি ধরে গোস্ত নিতে ২৫ হাজার টাকা দেন। ১০ জানুয়ারি দিবাগত রাতে কসাই বজল প্রমানিক একটি গরু মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে নিয়ে জবাই করে। সেখান থেকে ৭৬ কেজি গোস্ত নিয়ে মুক্তা চৌধুরীর লোকজন ভূরিভোজনের জন্য বিরিয়ানি পাক করেন।
অন্যদিকে, গত ১০ জানুয়ারি রাতে পাশ্ববর্তী জোড়খালী ইউনিয়নের দক্ষিণ খামার মাগুরা এলাকার কৃষক এফাজ মণ্ডলের গোয়ালঘর থেকে ৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ষাড় গরু চুরি হয়। ভোরের দিকে ওই কৃষক তাঁর গোয়ালঘরে গরু না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও গরু চুরির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। এ সময় স্থানীয়রা কসাই বজলু প্রমানিকের কাছে গরুর মাথা ও চামড়া দেখতে পান। পরে ওই মাথা ও চামড়া এফাজ মণ্ডলের গরুর বলে শনাক্ত করা হয়। এ সুযোগে সদলীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা মুক্তা চৌধুরীকে ফাঁসাতে ফন্দি-ফিকির আঁটে। এক পর্যায়ে কয়েক শত লোক জমায়েত করে তাঁরা মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখান গরু চুরি করে ভূরিভোজনের আয়োজন করা হয়েছে মর্মে মুক্তা চৌধুরীকে দায়ী করেন। এতে মুক্তা চৌধুরী অবাক হলেও দলীয় কোন্দলে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন।
অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেন। ঘটনাস্থল থেকে যুবদল কর্মী সুমন ও কসাই বজলুকে আটক করে পুলিশ। এ সময় পুলিশ গরুর চামড়া, মাথা ও কিছু গোস্ত জব্দ করে।
এ ঘটনায় গরুর মালিক এফাজ মণ্ডল বাদী হয়ে মাদারগঞ্জ থানায় বিএনপি নেতা মুক্তা চৌধুরীসহ ১২ জনের নামোল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ৮ জনকে আসামি দেন। ওই মামলায় সুমন মণ্ডল ও বজলুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। মামলায় মুক্তা চৌধুরী এবং তাঁর স্ত্রীকেউ আসামি করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে সন্ধ্যায় উপজেলা বিএনপি মুক্তা চৌধুরীকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, দলের ভাবমূর্তি ও মর্যাদা ক্ষুণ্নের সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তা চৌধুরীকে দলীয় পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হলো। একই সঙ্গে তাঁকে কেন দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না, সেটি সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তাঁর স্ত্রীকেও মহিলা দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেয় দল।
অভিযোগের বিষয়ে বিএনপি নেতা মাহমুদুল হাসান
চৌধুরী মুক্তা বলেন, 'আমি রাজনৈতিকভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার। আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক ভাবে হেয় করতে একটি পক্ষ ওঠেপরে লেগেছে। তারাই আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।'
মাদারগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) সাইদুর রহমান সাঈদ বলেন, আমরা চুরি হওয়া গরুর আলামত জব্দ করেছি। কসাইসহ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট মঞ্জুর কাদের খান বাবুল বলেন, প্রাথমিকভাবে অভিযুক্ত মাহমুদুল হাসান চৌধুরী মুক্তাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কেন তাকে স্থায়ী বহিস্কার করা হবে না সেই কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে।'
সরজমিনে জানা গেছে, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে বহুতল বিশিষ্ট সুরম্য একাধিক ভবনের মালিক মুক্তা চৌধুরীদের। মুক্তা চৌধুরীরা সাত ভাই, দুই বোন। প্রত্যাকেই উচ্চ শিক্ষা অর্জন শেষে স্ব-স্ব কর্মে প্রতিষ্ঠিত। তারমধ্যে এক ভাই জার্মান প্রবাসী। এক ভাই অডিট কর্মকর্তা থেকে অবসর নিয়েছেন। এক ভাই একটি বেসরকারি ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার। মুক্তা চৌধুরী গ্রামাণ ব্যাংকের একটি শাখার প্রিন্সিপাল অফিসার।
স্থানীয় বাসিন্দা আবেদ আলী, মিজান, আকলিমা, মিজানসহ অনেকেই বলেন, 'মুক্তা চৌধুরীরা প্রতিবছর অন্তত ১০ লাখ টাকা এলাকায় দান-খয়রা করেন। তাঁরা প্রভাবশালী ধনাঢ্য পরিবার। নোংরা রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন মুক্তা চৌধুরীসহ তাঁর পরিবার। গরু চুরি করে দলীয় কর্মীদের ভূরিভোজের বিষয়টি নিছক চক্রান্ত। মূলত দলীয় নেতা-কর্মীদের ভূরিভোজের জন্য মুক্তা চৌধুরী গোস্ত কিনতে কসাই বজলুকে টাকা দেন। কিন্তু কসাই বজলু গরু চুরি করে এনে মুক্তা চৌধুরীর বাড়িতে জবাই করে। যা মুক্তা চৌধুরীসহ তাঁর পরিবারের কেউই বুঝতে পারেনি। পরবর্তীতে কসাইকে স্থানীয় জনতা আটক করে পুলিশে খবর দেয়। এ ঘটনায় সদলীয় নেতা-কর্মীদের চক্রান্তের শিকার হন মুক্তা চৌধুরী।
১১ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
১২ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ৩২ মিনিট আগে
১৯ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
২০ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
২ দিন ১১ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
২ দিন ২০ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে