মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলায় গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর চারটি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে।
উপজেলার মোট নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে রাজঘাট, কালিঘাট, ভুনবীর এবং আশিদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদে সৃষ্টি হয়েছে অনেকটা অচলাবস্থা। এই চার ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা নাশকতা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ায় গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে রয়েছেন।
আত্মগোপনে থাকা চার চেয়ারম্যান হলেন, ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জী, ৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা, ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ এবং ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন জহর। এই চারজন চেয়ারম্যান উপজেলা এবং ইউনিয়ন আওয়ামীলের কমিটির সক্রিয় নেতা ও সদস্য ছিলেন।
ইউপি চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির কারণে এসব ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। নাগরিকরা জন্ম নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সেবা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে যে, আত্মগোপনে থাকা চেয়ারম্যানরা কখনও কখনও তাদের অধীনে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাধ্যমে সেবাগ্রহীতাদের সনদ ও প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করছেন।
ওই চার ইউনিয়ন পরিষদগুলোতে সরেজমিনে গিয়েও পরিষদ কার্যালয়ে তাদের পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও চার চেয়ারম্যানের মধ্যে তিন চেয়ারম্যানের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, চেয়ারম্যানদের অনুপস্থিতির কারণে তারা যথাসময়ে সেবা পেতে পারছেন না, যার ফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে।
উপজেলার ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়নের পাত্রিকুল গ্রামের মো. আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমি আমার ছোট ভাইয়ের ছেলের জন্ম নিবন্ধন করতে তিনদিন ইউনিয়ন পরিষদে এসেছি। এখনো জন্ম নিবন্ধন সনদ হাতে পাইনি। সচিব সাহেব বলেছেন ২-১ দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সাহেবের স্বাক্ষর এনে সনদটি আমাকে দেবেন। একই ইউনিয়নের লইয়ারকুল গ্রামের এক প্রবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি নাগরিক সনদের জন্য একাধিক দিন এসেছি। আজও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য সনদটি পাইনি। কবে পাবো জানি না।’
২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়নের সচিব রবীন্দ্র চন্দ্র দেব বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব মাঝে-মধ্যে আইন (আসেন) আরকি। তাইন (তিনি) অসুস্থ্য। বাড়ি থাইক্কা (থেকে) অফিস করইন (করেন)। মাঝে-মধ্যে বিকালে আইয়া অফিস টাইমে শেষদিকে কাগজপত্রে স্বাক্ষর দেইন (দেন)। ওভাবে তাইন চালাইয়া যাইরা।
৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ডেংগারবন (জানাউড়া) গ্রামের মো. রজব আলী বলেন, ‘আমার মেয়ে শফিকুন্নেছার জন্ম নিবন্ধন করতে দিয়ে গেছিলাম কয়েকদিন আগে। এর মধ্যে দুই দিন ইউনিয়নে এসেও পাইনি। আজ আমার মেয়ের জন্ম নিবন্ধন হাতে পেলাম। শুনেছি চেয়ারম্যান সাহেব পরিষদে আসেন না। তিনি কোন স্থান থেকে স্বাক্ষর দিয়েছেন তা আমি জানি না।
৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব দীপক কুমার শর্মাকে ইউনিয়ন কার্যালয়ে গিয়ে পাওয়া যায়নি। তার ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। তবে এই ইউনিয়নের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তা রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের চেয়ারম্যান স্যার ইউনিয়ন পরিষদে না আসলেও আমাদের কাজকাম বন্ধ নেই। কেউ কোন কাগজপত্র নিয়ে আসলে আমরা চেয়ারম্যান স্যারের স্বাক্ষর এনে তাদের হাতে কাগজ পৌছে দেই।
৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের রাজঘাট চা বাগানের নারী শ্রমিক গিতা বুনার্জী বলেন, ‘আমি একটা কাজে বেশ কয়েকদিন ইউনিয়ন পরিষদের এসেছি। চেয়ারম্যান বাবুরে পাই না। তাইন কই আছইন কেউ কয়ও না।
৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সচিব নারায়ন চন্দ্র গোস্বামী বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব আতকা আতকা (মাঝে-মধ্যে) পরিষদে আসেন। মাঝে-মধ্যে বিচার-আচারে বাইরে গেলে তানরে পাওয়া যায় না। তাইনের মোবাইলে ফোন করলেও তানরে পাওয়া যায়।
৮ নম্বর কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের বিলাসছড়ার বাসিন্দা জয়তুন বলেন, ‘আমি গত সপ্তাহে একটি বিশেষ কাজে চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে এসেছিলাম। সেদিন পাইনি। আজও এসেছি, তিনি নেই। পরিষদের কেউ বলেও না তিনি কোনদিন আইবা। ওই ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সঞ্জয় নায়েক বলেন, ‘চেয়ারম্যান সাহেব অফিসিয়্যালি সব কামকাজ করেন। এতে তিনি রেগুলার পরিষদে আসেন না। মানুষের বিভিন্ন ধরণের আবেদন আমরা সংগ্রহ করে রাখি। যেদিন চেয়ারম্যান সাহেব আসেন সেদিন আমরা স্বাক্ষর নিয়ে মানুষকে দেই। তিনি নিয়মিত না আসলেও মানুষের কোন সমস্যা হয় না।
কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা মুঠোফোনে বলেন, ‘দরকার হলে ফোন দিলে পাইবা ইউনিয়ন পরিষদে। সব সময় পরিষদে যেতে পারি না। এখনো বাইরে আছি।’ বলেই তিনি ফোনের সংযোগ কেটে দেন।
তিনি ছাড়া ২ নম্বর ভুনবীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রশিদ, ৬ নম্বর আশীদ্রোন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রনেন্দ্র প্রসাদ বর্ধন (জহর) ও ৭ নম্বর রাজঘাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিজয় বুনার্জীর মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণ উদ্বেগের মধ্যে দিন পার করছেন এবং তারা দ্রুত সেবা পাওয়ার জন্য চেয়ারম্যানদের উপস্থিতি দাবি করছেন।
চার চেযারম্যানের মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীমঙ্গল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আমিনুল ইসলাম।
এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিন বলেন, আমি এ বিষয়ে জানতাম না। বিষয়টি খতিয়ে দেখে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
১২ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
১৩ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
১৫ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
১৬ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে