লাখাইয়ের হাওরের মাঠে গরু চরিয়ে অন্ন জোটে রমজান বিবির।
ষাটোর্ধ্ব রমজান বিবির স্বামী মারা গেছেন। দুই ছেলে থাকলেও খোঁজ-খবর রাখেন না তেমনভাবে। সেজন্য দিনভর মাঠে গ্রামবাসীর গরু চরিয়ে দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতে হয় নিরূপায় বৃদ্ধাকে। দীর্ঘদিন গরু চরিয়ে এলাকায় 'রাখাল' হিসাবে পরিচিত হয়ে গেছেন তিনি।
লাখাই উপজেলার মোড়াকরি গ্রামের মৃত ওয়াহেদ আলীর স্ত্রী তিনি। প্রায় ত্রিশ বছর ধরে তিনি রাখালের কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও তাঁর ভাগ্যে জুটেনি সরকারি ভাতা অথবা সহায়তা।
তিনি জানান- ৫০ থেকে ৬০টি গরু প্রতিদিন সকাল ৮টার দিকে গ্রামের পশ্চিম পাশে তিন চার কিলোমিটার দূরের বড়চর মাঠে নিয়ে যান, সারাদিন রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিকালবেলা কৃষকদের বাড়িতে পৌছে দিতে হয় গরুগুলো। এ দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই সারা মাসের খাবার-খরচ চলে।
রমজান বিবি বলেন- স্বামী মারা গেছেন সাত বছর আগে। দুই ছেলেও বিয়ে করে যার যার মতো সংসারী। বর্তমানে শরীর তেমন ভাল নেই, বয়স হয়েছে। তারপরও এ কাজটি ছেড়ে দিইনি। কারণ এ কাজ ছেড়ে দিলেও অন্য কোন কাজ করতে হবে। কাজ না করলে খাবার পাবো না। প্রতিদিন বাড়ি থেকে প্রায়, ৩/৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গরুর দল নিয়ে
সারাদিন মাঠে থাকি। বিকালে ফিরে আসি। রোদ-বৃষ্টি ও খরা গা সয়ে গেছে।
এ পর্যন্ত কোন সরকারি সহায়তা অথবা ভাতা পাইনি। স্বামীর রেখে যাওয়া ভিটায় এক শতাংশ জায়গা থাকলেও ঘর নেই। বড় ছেলের ঘরে থাকি। সে খোঁজ খবর নেয়।
তবে তার সন্তান বেশী হওয়ায় তেমন কিছু দিতে পারে না।
রমজান বিবির বড় ছেলে কাউছার মিয়া জানান, মায়ের বয়স ৬০ বছরের বেশী। তারপরও এ কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী বছর থেকে আর এ কাজ করতে দিব না।
এ ব্যাপারে মোড়াকরি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম মোল্লা ফয়সাল জানান, রমজান বিবি কোন প্রকার ভাতা পান কিনা তা আমার জানা নেই।
তবে এ বিষয়ে খোঁজ নেব।
লাখাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অনুপম দাশ অনুপ বলেন, লাখাই উপজেলার কোন এমন মহিলা কাজ করেন কি না তা আমার জানা নেই। তবে এমন অসহায় নারী থাকলে তাকে সরকারি ভাতা দেয়ার ব্যবস্থা করব।