কুড়িগ্রামে চাঞ্চল্যকর শিশু হত্যার মূলহোতা ১১ বছর ধরে পলাতক এক দম্পতিকে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে উলিপুর থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম।
এই চাঞ্চল্যকর ও হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে জেলার উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নে। পুলিশের তদন্তে শিশু হত্যা ঘটনায় প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছে তারা।
বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সকালে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশ।
জানা গেছে, ২০১৩ সালে উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের গনকপাড়া গ্রামের মোঃ চাঁদ মিয়া ওরফে ভগলুর ৭বছর বয়সী কন্যা শিশু "চম্পা" কে শ্বাসরোধ করে হত্যা তারই চাচা মিন্টু বসুনিয়া ও স্ত্রী মোর্শেদা বেগম। পরে এই দম্পতিকে ১১ বছর পলাতক থাকার পর গাজিপুর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে উলিপুর উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের গনকপাড়া গ্রামে আশরাফ ডাক্তারের পুকুরে গ্রেফতারকৃত আসামী মিন্টু বসুনিয়া, মামলার বাদী মোঃ চাঁদ মিয়া ওরফে ভগলু (আসামী মিন্টুর আপন বড় ভাই) অন্যান্যরাসহ মাটি কাটতে গিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই এলাকার বজরুল এর সাথে বাদী ও আসামী মিন্টু মিয়ার কথা কাটাকাটি হয়, এক পর্যায়ে আসামী মিন্টু বসুনিয়া ও তার বড় ভাই অর্থাৎ অত্র মামলার বাদীসহ প্রতিপক্ষ নজরুলকে লাঠি দিয়ে মারপিট করে।
মারপিটের ফলে নজরুল গুরুতর অসুস্থ্য হয়ে পড়লে তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরে গুজব সৃষ্টি হয় যে নজরুল মারা গেছে। উক্ত ঘটনার দায় হতে নিজেকে আড়াল করার জন্য এবং প্রতিপক্ষকে পাল্টা মামলায় ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত আসামী মিন্টু বসুনিয়া ও তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগম যোগসাজোসে অত্যন্ত সু-কৌশলে আপন ভাতিজি অর্থাৎ বাদীর ৭ বছরের শিশু কন্যা চম্পা'কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বাড়ির পার্শ্ববর্তী বাঁশঝাড়ে লাশ ফেলে রেখে খোঁজাখুজি করতে থাকে।
খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে আসামী মিন্টু মিয়াই উক্ত বাঁশ ঝাড় হতে চম্পার লাশ সনাক্ত করে। মামলা রুজু হয় প্রতিপক্ষ নজরুলের পরিবারের বিরুদ্ধে। আসামী সহ বাদীর লোকজন প্রতিপক্ষ নজরুল এর ভাতিজা হাফিজুলকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উলিপুর থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর তদন্ত মোঃ জাকির উল ইসলাম চৌধুরী মামলাটি সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ আইনানুগ তদন্তকালীন সময়ে ঘটনার ভিন্নরুপ মোড় নেয়।
তদন্তের এক পর্যায়ে বাদীর আপন ভাই গ্রেফতারকৃত আসামী মিন্টু বসুনিয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আসামী মিন্টু বসুনিয়া প্রতিপক্ষকে হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য নিজ স্ত্রীর সহযোগীতায় তার আপন ভাতিজি চম্পা'কে হত্যার দায় শিকার করেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আসামী মিন্টু বসুনিয়াকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ।
পরে আসামী মিন্টু বসুনিয়া উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে তার স্ত্রী মোর্শেদা বেগমসহ দীর্ঘ প্রায় ১১ বছর যাবৎ পলাতক হয়ে আত্মগোপনে থাকেন। পরবর্তীতে উলিপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি গোলাম মর্তুজার দিকনির্দেশনায় একটি চৌকস টিম বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ শুরু করে গ্রেফতারী পরোয়ানামূলে গাজিপুর র্যাব-৩ এর সহযোগিতায় আসামীদেরকে গাজীপুর জেলার বড়বাড়ি জয় বাংলা তিন রাস্তার মোড় এলাকা হতে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে।
কুড়িগ্রাম জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মোঃ রুহুল আমীন বলেন, এটি একটি চাঞ্চল্যকর ও হৃদয় বিদারক ঘটনা। আসামী প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছে। অপরাধী যতই চতুরতা অবলম্বন করুক না কেনো একদিন না একদিন তাকে আইনের আওতায় আসতেই হবে, যার প্রমান সরূপ ২০১৩ সালের শিশু হত্যা মামলার মূলহোতা দম্পতিকে ১১ বছর পলাতক থাকার পর গ্রেফতার করলো উলিপুর থানা পুলিশ যা সম্ভব হয়েছে সুষ্ঠু পুলিশি তদন্তের মাধ্যমে। নিরাপদ কুড়িগ্রামের লক্ষ্যে আমাদের এই অভিযান নিয়মিতভাবে অব্যহত থাকবে আমরা সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা কামনা করি।
৩ দিন ৯ ঘন্টা ১৮ মিনিট আগে
৪ দিন ১০ ঘন্টা ৭ মিনিট আগে
৪ দিন ১০ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
৫ দিন ৩ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
৫ দিন ৬ ঘন্টা ২০ মিনিট আগে
৫ দিন ৭ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
৮ দিন ৫ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে
৮ দিন ২৩ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে