আক্কেলপুরে মাঠে আলু থাকতেই হিমাগার বন্ধ ঘোষণা.
আক্কেলপুরের আলীমামুদপুর গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল মণ্ডল আট বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। তিন বিঘা জমির আলু তুলে বিক্রি করেছেন, যা দাম পেয়েছেন, তাতে উৎপাদন খরচ উঠবে না। বাকি আলু পাশের গোপীনাথপুর হিমাগারে রাখতে বুকিং দিতে এসে শোনেন স্লিপ দেওয়া শেষ। এখন মাঠে পড়ে থাকা আলু হয় পানির দরে বিক্রি করতে হবে। অন্যথায় সেখানেই পচবে। এ অবস্থায় আলু এখন গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে এ কৃষকের কাছে।
স্থানীয় বাজারে কার্ডিনাল আলু প্রতিমণ ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকায়, ডায়মন্ড ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায়, স্টিক ৪৭০ থেকে ৪৮০ টাকায় ও দেশি আলু ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ প্রতিমণ আলু উৎপাদনে খরচ পড়েছে সাড়ে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এতে লোকসান গুনতে হবে কৃষককে।
আলু সংরক্ষণের জন্য গোপীনাথপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর হিমাগার লিমিটেড এবং তিলকপুর ইউনিয়নের দীনা কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে। দুটি হিমাগারেরই ধারণ ক্ষমতা ১৪ হাজার টন, যা মোট উৎপাদনের মাত্র সাড়ে ৯ শতাংশ। এর মধ্যে গোপীনাথপুর হিমাগারে পার্শ্ববর্তী ক্ষেতলাল এবং বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার কৃষক ও ব্যসায়ীরা আগেভাগেই বুকিং দিয়ে রেখেছেন। একইভাবে দীনা কোল্ডস্টোরেজেরও নওগাঁ সদর ও বগুড়ার শান্তাহারের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আগেই বুকিং দিয়ে রেখেছেন। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।
গোপীনাথপুর হিমাগারের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা মামুদপুর গ্রামের কৃষক মাহবুব আলম অভিযোগ করে বলেন, অল্প করে আলু রাখব, সেই সুযোগও পাচ্ছি না। অনেকে শেষ ঘোষণার পরেও বুকিং পাচ্ছেন। এসব দেখার কেউ নেই।
এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন গোপীনাথপুর হিমাগারের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম। তাঁর দাবি, ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী বুকিং নিয়ে নিয়েছেন। সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অগ্রিম বুকিং নেওয়ার নিয়ম আছে। কৃষকরা এতে আগ্রহী নন। এ সুযোগ ব্যবসায়ীরাই কাজে লাগায়।
চলতি বছর বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুরুতেই কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে দাবি করেছেন তিলকপুর ইউনিয়নের দীনা কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপক সুপন বড়ুয়া। অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের অগ্রিম স্লিপ বুকিং দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর ভাষ্য, শুধু কৃষকদের আলুতে হিমাগার ভরবে না। তবে আমরা বাইরের নয়, স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অল্প করে অগ্রিম কার্ড দিয়েছি।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছর উপজেলায় ৫ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছিল। এ বছর আলু উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ৬৮০ হেক্টরের বেশি জমিতে আলু চাষ হয়েছে। মোট উৎপাদিত আলুর পরিমাণ ১ লাখ ৩০ হাজার টন। এখন পর্যন্ত কৃষকের প্রায় ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমির আলু মাঠেই পড়ে আছে।
কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন জানান, এ বছর বাজারে আলুর কাঙ্ক্ষিত দাম না থাকায় কৃষকরা সংরক্ষণে বেশি ঝুঁকছেন। এ কারণে হিমাগারে বুকিং পাওয়া যাচ্ছে না।
ইএনও মনজুরুল আলম বলেন, আলু সংরক্ষণে কৃষকদের অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে হিমাগার ব্যবস্থাপকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।