নারী বিশ্বকাপের মূলপর্বে বাংলাদেশ কালিগঞ্জ কৃষ্ণনগরে ভ্রাম্যমাণ আদালতে গাঁজা বিক্রেতা ও ক্রেতার জেল-জরিমানা ফতুল্লার কাশীপুরে পিস্তলের গুলিতে পাভেল হত্যা মামলার প্রধান আসামী রায়হান বাবু গ্রেফতার ভর্তিচ্ছুদের পাশে কুবি ছাত্রদল গৃহকর্মী-যৌনকর্মীদের ‘শ্রমিক’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ জাবিপ্রবি ফটকে নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম, সর্বত্র বিএনপির ব্যানার রায়পুর রিপোর্টার্স ইউনিটির এপ্রিল মাসের সভা সম্পন্ন পাঁচবিবিতে ভূয়া ডিবি পুলিশের পরিচয়ে চাঁদা দাবি গ্রেফতার-২ কবি ও সাংবাদিক বিল্লাল হাওলাদারকে সুনামগঞ্জে সংবর্ধনা নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে বাঁশের ঝোপে বিপুল পরিমাণে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার রায়গঞ্জে পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু ইয়াবা কারবারি ও গাঁজাসহ গ্রেফতার-৮ আশাশুনি সরকারি কলেজে ৬ শিক্ষককে এডহক নিয়োগ এডভোকেট শহিদুল ইসলাম ৩ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মনোনীত লালপুরে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় পথচারী নিহত সর্বস্তরের শিক্ষা জাতীয়করণ চাই শিরোনামে যশোরে জেলা শিক্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল সিরাজগঞ্জে স্থাপনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন বরিশালে মুফতি ফয়জুল করিমকে বৈধ মেয়র হিসাবে ঘোষনা করার দাবীতে গণমিছিল জয়পুরহাটে স্বর্ণের দোকানে তল্লাশী করতে গিয়ে দুই ভুয়া ডিবি পুলিশ আটক ইসলামপুরে ১০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ ৩ মাদক কারবারী আটক

ভাষা আন্দোলনের ভূমিকায় ডোমারের গর্বিত ক'জন সন্তান

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সারাদেশ যখন উত্তাল, তখন ডোমার উপজেলার কয়েকজন কৃতি সন্তান ভাষা আন্দোলনের অগ্রসৈনিক হিসেবে মায়ের ভাষা ‘বাংলা’ কে রাষ্ট্রভাষা করতে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা হলেন—ভাষাসৈনিক অ্যাড. দবির উদ্দিন আহমেদ, গোলাম রব্বানী বুলবুল, দৌলতুন্নেসা খাতুন, অ্যাড. আনোয়ার হোসেন ও অ্যাড. রফিকুল ইসলাম।


শহীদ সালাম, বরকত, রফিক, শাফিউর, জব্বার সহ অগণিত বাঙালি ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলা ভাষা, সারাবিশ্বে বিরল সংগ্রাম। পৃথিবীর কোনো জাতিগোষ্ঠী তাদের ভাষার দাবীতে রাজপথ রক্তে রঞ্জিত করেনি। বায়ান্ন’র ২১শে ফেব্রুয়ারী ঢাকায় ছাত্র-জনতার উপর পাকিস্তান পুলিশের গুলিতে ছাত্র হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে উত্তরবঙ্গে গড়ে ওঠে চরম আন্দোলন। সারাদেশে ভাষার দাবীতে আন্দোলন, সংগ্রাম গড়ে উঠলে এক পর্যায়ে পাকিস্তান তাদের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা ‘বাংলা’ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। রক্তে কেনা মায়ের মুখের ভাষা বাংলার সম্মানার্থে আজ সারাবিশ্বে পালন হয় ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবস’।


★ ভাষা সৈনিক অ্যাড. দবির উদ্দিন আহমেদ (১৯০৩-১৯৯৩) : ব্রিটিশ ভারতের তৎকালীন নীলফামারী মহকুমার ডোমার থানার ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভোগডাবুড়ী গ্রামের মৃত আমির উদ্দিন আহমেদ প্রামানিক ও চন্দন বিবি প্রামানিকের ঘরে বাংলা ১৩০৯ সনে জন্মগ্রহণ করেন দবির উদ্দিন আহমেদ। নিজেদের পরিবারের প্রতিষ্ঠিত স্কুল উত্তর ভোগডাবুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাল্যশিক্ষা গ্রহণ করেন তিনি। এরপর কিছুদিন কারেঙ্গাতলী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে নীলফামারী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯২২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯২৪ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বোর্ড অফ ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯২৬ সালে বিএ ডিগ্রি ও ১৯২৮ সালে এলএলবি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। সে-বছরই আইন পেশায় যুক্ত হয়ে আমৃত্যু তিনি নীলফামারী জেলায় আইনজীবী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দীর্ঘদিন নীলফামারী জেলার আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তান আমলে কিছুদিন মুসলিম লীগ করেন ও পরে, আওয়ামী মুসলিম লীগের সাথে যুক্ত হন তিনি। এসময় মায়ের ভাষার রক্ষার জন্য আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। তিনি ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে কারাবরণ করেন ও ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের পূর্ব পাকিস্তান আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি দীর্ঘদিন তৎকালীন রংপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)-এর রাজনীতির সাথে যুক্ত থাকেন। ১৯৯৩ সালের জুলাই মাসে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।


★ ভাষা সৈনিক গোলাম রব্বানী বুলবুল (১৯৩৫-১৯৯৮) : তেভাগা আন্দোলনের সংগ্রামী নেতা গোলাম আজিজ ও জয়নব নাহারের কোল আলো করে ১৯৩৫ সালে জন্ম নেয় তাদের প্রথম সন্তান গোলাম রব্বানী। নানী আদর করে নাম রাখেন বুলবুল। ১৯৪৫ সালে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী শেষে ডোমার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাশ করে সে বছরই উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজ, রংপুরে আইএসসি-তে ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” দাবীতে সারা দেশ যখন উত্তাল, উত্তরবঙ্গের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কারমাইকেল কলেজেও রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সোচ্চার। গোলাম রব্বানী বুলবুল কারমাইকেল কলেজের ভাষা আন্দোলনে ছিলেন অগ্রসৈনিক। ১৯৫২ সালে ২৩ ফেব্রুয়ারী রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ আবুল বরকতের গুলিবিদ্ধ হওয়ার রক্তাক্ত স্থানটিতে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। রংপুরের ছাত্ররাও শহীদ মিনার নির্মাণের তাগিদ অনুভব করে। ১৯৫৬ সালে রংপুরে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতের বেলা ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী ময়দানে লাইব্রেরি ভবনের মাঝখানের হলরুমের ঠিক সম্মুখ ভাগে ছোট আকারের শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। ছাত্ররা নিজেরাই ইট, সিমেন্ট, বালি জোগাড় করে মিনারটি নির্মাণ করেন। এই শহীদ মিনার নির্মাণ কাজে ছাত্রনেতা গোলাম রব্বানী বুলবুল অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। পরদিন ভোর বেলা এই শহীদ মিনারেই রংপুরের আাপামর ছাত্র জনতা অমর শহীদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে। অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শপথ গ্রহণ করে। ১৯৫৩ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের রংপুর জেলা কমিটি গঠিত হলে গোলাম রব্বানী বুলবুল সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হন। সভাপতি ছিলেন সুফী মোতাহার হোসেন, সহ-সভাপতি মুকসুদ হোসেন, সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী (বুলবুল)। তার পরিবার ছিল ডোমারে একটি পরিচিত সাংস্কৃতিক পরিবার। গোলাম রব্বানী বুলবুল ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব। তিনি ডোমারের ঐতিহ্যবাহী ‘শহীদ ধীরাজ-মিজান স্মৃতি পাঠাগার ও মিলনায়তন’ এর আজীবন সদস্য ছিলেন। শেষ জীবনে তিনি হাঁপানি (অ্যাজমা) ও ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হন। ১৯৮৩ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের আমন্ত্রণে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে তিনি সেখানে যান এবং তিন মাস চিকিৎসা শেষে সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসে। সেখানে অবস্থান কালে সেখানকার সমাজ ব্যবস্থা, মানুষের জীবনাচরণ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।ডোমারের কৃতি সন্তান, মানবকল্যাণে আমৃত্যু ব্রতী, সমাজ বদলের লড়াকু সৈনিক, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা গোলাম রব্বানী বুলবুল ১৯৯৮ সালের ১৯শে জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ২০ জুলাই, ১৯৯৮ তারিখে ডোমার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ও কবরস্থানে (তৎকালীন চিকনমাটি নতুন ঈদগাহ ও কবরস্থান) ডোমারবাসীর অন্তিম শ্রদ্ধায় সমাহিত করা হয় বিপ্লবের এই অগ্রপথিককে।

★ ভাষা সৈনিক দৌলতুন্নেসা খাতুন : বগুড়ার সোনাতলায় ১৯২২ সালে জন্মগ্রহণকারী দৌলতুন্নেসা খাতুনের শৈশব ও কৈশোর কেটেছে ডোমারে। কারণ, তার পিতা ডোমার রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত ছিলেন স্টেশন মাস্টার হিসেবে। শিক্ষাজীবনে ডোমার বালিকা বিদ্যা নিকেতনের (তৎকালীন সরলা বালিকা বিদ্যালয়) একজন কৃতি শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি ১৯৪০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাশ করলে সারা রংপুরে হৈচৈ পড়ে যায়। এভাবেই নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ব্রিটিশ শাসনামলে তিনি কংগ্রেসের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পরেন এবং ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কারণে দুইবার কারাবরণ করেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্ট থেকে রংপুর-দিনাজপুর-বগুড়া জেলার সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচনী এলাকার এমএলএ নির্বাচিত হন এবং হোম ডিপার্টমেন্টের পার্লামেন্টারী সেক্রেটারি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি পুনরায় গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম নির্বাচনী এলাকা থেকে সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রস্তাবিত বিলে সংসদ সদস্যদের সমর্থনে যৌতুক বিরোধী আইন পাশ হয়।


★ ভাষা সৈনিক অ্যাড. আনোয়ার হোসেন : বিশিষ্ট আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাড. আনোয়ার হোসেন পঞ্চাশ দশকে উত্তরবঙ্গের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ কারমাইকেল কলেজ, রংপুর’র ছাত্র হিসেবে ভাষা আন্দোলনে কৃতিত্বপূর্ণ নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেন। তিনি নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চিকনমাটি গ্রামের মধ্য ধনীপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আবুল হোসেন (তৎকালীন স্টেশন মাস্টার)। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার দাবীতে যেমন আন্দোলন করেছিলেন, ঠিক তেমনিভাবে দেশমাতৃকার টানে স্বাধীনতা আন্দোলনেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে নীলফামারী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। ২০০৪ সালের ১১ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন তিনি।


★ ভাষা সৈনিক অ্যাড. রফিকুল ইসলাম : নীলফামারীর ডোমার উপজেলার চিকনমাটি ধনীপাড়ায় জন্মগ্রহণকারী অ্যাড. রফিকুল ইসলাম ছিলেন মহান ভাষা আন্দোলনের একজন অগ্রসৈনিক। তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে সরকারি প্রতিনিধি পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তৎকালীন সময়ে উপজেলা পর্যায়ে আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। সেখানে তিনি অনর্গল ইংরেজিতেই বাদী ও আসামী পক্ষে আদালতের কার্যক্রম সম্পাদন করতেন।


মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কীর্তিমান ভাষাসৈনিকদের প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।

আরও খবর
'হৃদয়ে ডোমার'-এর ১৬তম বর্ষপূর্তি উদযাপিত

৩ দিন ১০ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে