মিয়ানমার থেকে শতভাগ বাকিতে বাংলাদেশে আনা হয় মাদকের চালান। নির্ধারিত এজেন্টের কাছে বিক্রি ও অর্থ সংগ্রহ করে জমানো হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। ব্যবসায়ীরা যা বিভিন্ন বিক্রয়কর্মীর মাধ্যমে টেকনাফের সংঘবদ্ধ হুন্ডি কারবারিদের কাছে পাঠায়। আর হুন্ডি কারবারিরা টেকনাফের কয়েকটি ব্যাংকের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠিয়ে দেন। যে টাকা ডলারে রূপান্তরিত হয়ে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া হয়ে পৌঁছে যায় মিয়ানমারে অবস্থানরত মাদকের ডিলারদের কাছে।
শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রঙ্গিখালী গহিন পাহাড়ে পরিচালিত অভিযানে ইয়াবা, আইস ও অস্ত্রসহ আটক দুই মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৫। এরপর দুপুরে র্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএইচ সাজ্জাদ হোসেন।
আটককৃতরা হলেনÑ টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ওয়াব্রাং এলাকার রফিক আহমেদ (৪০) ও মৌলভীপাড়ার ফরিদ আলম (২৮)।
র্যাব জানিয়েছে, দুজনই মিয়ানমারের নাগরিক হলেও বসবাস করেন বাংলাদেশে। তারা এ অঞ্চলের মাদক চোরাকারবারির অন্যতম হোতা নবী হোসেনের সহযোগী।
র্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ৩ লাখ ১৪ হাজার পিস ইয়াবা, ২ কেজি ক্রিস্টাল মেথ বা আইস, ২টি ওয়ান শুটার গান এবং ৪ রাউন্ড কার্তুজ।
সংবাদ সম্মেলনে সাজ্জাদ হোসেন বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রঙ্গিখালীর গহিন পাহাড়ে রাত ২টা থেকে ভোর পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে মাদক ও অস্ত্রসহ আটক করা হয় দুজনকে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, রফিক ছোটবেলায় তার বাবা-মায়ের সঙ্গে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে ওয়াব্রাং সুইচপাড়ায় বসবাস শুরু করে। প্রথমে নাফ নদে মাছ ধরলেও পরে স্থানীয় ও মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। রফিকের চাহিদা মতো মাদকের চালান প্রথমে নবী হোসেনের মাধ্যমে এনে রঙ্গিখালীর গহিন পাহাড়ের আস্তানায় ৬-৭ দিনের জন্য মজুদ করা হয়। পরে তার সিন্ডিকেটের সহযোগীরা এখান থেকে চালান স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী, রোহিঙ্গা ক্যাম্প এবং কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্ধারিত এজেন্টদের নিকট সুবিধাজনক সময়ে সরবরাহ করে। মাদক চালান সরবরাহের পর তারা পাহাড়ি আস্তানা ত্যাগ করত। নতুন চালান এনে নতুন আস্তানা তৈরি করে একই প্রক্রিয়ায় সরবরাহ করত।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএইচ সাজ্জাদ হোসেন আরও জানান, রফিক জানিয়েছে তার নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী দেশের মাদক ব্যবসায়ী সিকদারপাড়া এলাকার আইয়াজ এবং নাকফুরা এলাকার সলিম ও জুনায়েদের নিকট মাদকের চাহিদা দেওয়া হতো। চাহিদা মোতাবেক মাদক অবৈধ পথে নিয়ে আসার পর নির্ধারিত এজেন্টের নিকট বিক্রয় করে বিক্রয়লব্ধ অর্থ রফিক তার এক নিকটতম আত্মীয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করত। মাদকের মূল্য বাবদ ক্যাশ টাকা তার আত্মীয়ের মাধ্যমে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের নিকট প্রেরণ করত। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা টাকা বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয়কর্মীদের মাধ্যমে টেকনাফের কয়েকজন হুন্ডি ব্যবসায়ীর নিকট পাঠাত। হুন্ডি ব্যবসায়ীরা ওই টাকা টেকনাফের বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় প্রেরণ করত। পরবর্তীকালে এই টাকা ডলারে রূপান্তর করে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া হয়ে হাত-বদলের পর মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছত। গ্রেপ্তারকৃত রফিক মাদক ব্যবসার পাশাপাশি মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন ও মূল সমন্বয়কারী হিসেবেও ভূমিকা পালন করত। রফিকের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় হত্যা ও মাদকসহ তিনটি মামলা রয়েছে।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, রফিকের অন্যতম সহযোগী ফরিদ আলম। জিজ্ঞাসাবাদে মাদক সিন্ডিকেটের বেশকিছু সদস্যের বিস্তারিত তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। তাদের আটকে র্যাবের অভিযানিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এদিকে অপর এক অভিযানে গতকাল শুক্রবার টেকনাফের হাবিরপাড়ার সৈয়দুর রহমানের ঘর থেকে ৫০০ বোতল ফেনসিডিলসহ দুজনকে আটক করেছে র্যাব। আটককৃতরা হলেনÑ একই এলাকার সৈয়দুর রহমান (৪৯) ও তার ভাই আজিজুর রহমান (৪৪)।
র্যাব অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএইচ সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, এদের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা থেকে সাগরপথে টেকনাফে ফেনসিডিল আনত। দুই অভিযানে গ্রেপ্তার চারজনকে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
৪ দিন ১৮ ঘন্টা ৪ মিনিট আগে
১৩ দিন ১৯ ঘন্টা ২৬ মিনিট আগে
১৬ দিন ২১ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
২৭ দিন ২৩ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
৪৭ দিন ১৬ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
৬০ দিন ২০ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৮৭ দিন ২ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে
১০৫ দিন ২ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে