টাইফয়েড জ্বর (Typhoid Fever) একটি প্রতিরোধযোগ্য মারাত্মক সংক্রামক রোগ এবং এই-রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই অকালে মৃত্যুবরণ করে থাকে। দূষিত পানি বা খাবার খাওয়ার মাধ্যমে এই রোগের বিস্তার ঘটে এবং পরবর্তী সংক্রমণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইউনিসেফ-এর তথ্যানুযায়ী প্রতিবছর বাংলাদেশে ৫ লাখ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয় যার মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু মারা যায় ৫ হাজার ৫০০ জন। ২০২২ সালে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৮০০০ শিশু মারা গেছে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রতিবছর হাজারে ৪ জন মানুষ ও ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রতি হাজারে ১৯ জন শিশু এই জ্বরে আক্রান্ত হয় যার ৮৫% এর বয়স ২ থেকে ৪ বছরের মধ্যে।
টাইফয়েড জ্বর কেন হয়:
টাইফয়েড সাধারণত প্রতিরোধযোগ্য সংক্রমণ রোগ যা সালমোনেলা নামক একটি ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণের ফলে সৃষ্টি হয়। দূষিত পানি পান ও দূষিত পরিবেশে খাবার গ্রহণ এ-রোগের অন্যতম কারণ তাছাড়া রাস্তা বা খোলা পরিবেশে স্ট্রিট ফুড খাওয়াও কোন অংশে কম দায়ী নয়।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ:
টাইফয়েড জ্বর লক্ষণ বিহীন হতে পারে আবার ক্ষেত্রবিশেষ জীবন সংশয়ী হতে পারে। সাধারণ জ্বর থেকে দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ মাত্রার জ্বর (১০৩ -১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট), মাথাব্যথা ও কাপনি। কাশি ও শরীর ব্যথা। পেট ব্যথা (কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতেও পারে নাও হতে পারে)। বমি বমি ভাব বা বমি। কিছু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে র্যাশ বা লালচেদেনা থাকতে পারে।
টাইফয়েড জ্বরের ভয়াবহতা :
গুরুতর ক্ষেত্রে এটি মারাত্মক জটিলতা এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বেশি বয়সের শিশু এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া হতে পারে, এবং ছোট শিশুদের জন্য ডায়রিয়ার প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের (১০%-১৫%)এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিলতা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে যারা দুই সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে অসুস্থ থাকার পরেও কোন ধরনের চিকিৎসা গ্রহণ করেনি, তাদের মধ্যে এই জটিলতা সমূহ আরো প্রকোট আকার ধারণ করতে পারে। সবচেয়ে বেশি পান নাশক জটিলতাগুলো হল অন্তের রক্তপাত, অন্তের ছিদ্র, স্যামো ডায়নামিক্স শক এনকেফালোপ্যাথি। কার্যকর এন্টিবায়োটিক চিকিৎসার টাইফয়েড সাধারণত সেরে যায় এবং প্রাণঘাতী হয় না। তবুও সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সাপেক্ষ ও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। পক্ষান্তরে, এন্টিবায়োটিক ছাড়া মৃত্যুহার ২০% পর্যন্ত হতে পারে। এইরূপ সংক্রমিত ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারের আর্থিক ক্ষতিশোধন করে, সময় এবং উৎপাদনশীলতা নষ্ট করে এবং বহু দীর্ঘমেয়াদী জটিলতা সৃষ্টি করে।
কখন টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে:
আগামী ১২ অক্টোবর থেকে ৩০ ই অক্টোবর পর্যন্ত চলবে টাইফয়েড ক্যাম্পেইন। যেখানে প্রথম ১০ দিন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী/সমমান শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রীদের এক ডোজ(০.৫ মিলি) বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। পরবর্তী ৮ দিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বহির্ভূত ৯ মাস অর্থাৎ ২৭০ দিন বয়স থেকে ১৫ বছর অর্থাৎ ১৪ বছর ১১ মাস ২৯ দিন যাদের বয়স তাদের ১ ডোজ টাইফয়েড ভ্যাকসিন বিনামূল্যে প্রদান করা হবে। এই টিকা গুলো পাওয়া যাবে টিকা প্রদানের স্থানী ও অস্থায়ী কেন্দ্রে। টিকা নেওয়ার পূর্বে অবশ্যই জন্ম নিবন্ধনের ১৭ ডিজিট নম্বর দিয়ে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে নিয়ে আসতে হবে।
টাইফয়েডের টিকা নিতে কি কি লাগবে:
টাইফয়েডের এক ডোজ বিনামূল্যে টিকা নিতে ১৭ ডিজিট বিশিষ্ট জন্ম নিবন্ধন কার্ড দিয়ে vaxepi.gov.bd website গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে তারপর তার হার্ডকপি টিকাকেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে । যাদের জন্ম নিবন্ধন নেই তাদের টিকা কেন্দ্রে লাইন লিস্টিং ও হোয়াট লিস্টিং এর মাধ্যমে টিকা নিতে পারবে।
শামীম মাহমুদ সবুজ
স্বাস্থ্য সহকারী,
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দোহার, ঢাকা।
১০ দিন ৩ ঘন্টা ৯ মিনিট আগে
১০ দিন ৩ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আগে
১৯ দিন ২১ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
২৭ দিন ৭ ঘন্টা ৫৭ মিনিট আগে
৩২ দিন ১১ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
৩২ দিন ১৩ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
৩৩ দিন ৪ ঘন্টা ৩৪ মিনিট আগে
৩৪ দিন ৭ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে