_____________________________________
◾শেখ আব্দুল্লাহ : গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ৩নং শুকতাইল ইউনিয়নের শুকতাইল বাজারের সংলগ্নে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী শুকতাইল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালায়। বিদ্যালয়টি অর্ধশতবছরের বেশি সময় ধরে আট-দশটি গ্রামের শিক্ষার্থীদের একমাত্র শিক্ষাঙ্গন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। স্বাধীনতার পূর্বে প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টি শুকতাইল গ্রামের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাও রয়েছেন এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
এছাড়াও বর্তমানে জেলাপ্রশাসক থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন উচ্চপদে দায়িত্বরত রয়েছেন বিদ্যালয়টির প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু দুঃখের বিষয়, ঐতিহ্যবাহী শুকতাইল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়টি আজ মৃত প্রায় , হারিয়ে ফেলেছে অতীতের জৌলুস। দিনেদিনে খারাপ হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এসএসসির ফলাফল; বিদ্যালয় থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেক অভিভাবকগন। ফলে দিনেদিনে বিদ্যালয় কমছে শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার।
চলতি মাসের ১২ই মে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এসএসসির পরিক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হলে আবারও আলোচনায় আসে শুকতাইল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের করুন দশার কথা। এসএসসির ফলাফল জরিপে দেখা যায়, পশ্চিম গোপালগঞ্জের নয়টি উচ্চ বিদ্যালয়ের মধ্যে শুকতাইল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অবস্থান সবার শেষে দিকে, মাত্র ৫০% পাশের হার। এ খারাপ ফলাফলের দায়টা কার? এমতবস্থায় যখনই এ প্রশ্নটি উঠে তখনই শিক্ষক, মানেজিং কমিটি ও অভিভাবকগণ এ তিন পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করতে থাকে।
বিদ্যালয়টির দিনেদিনে খারাপ অবস্থা যাওয়ার কারন খিয়াল করলে বেশ কয়েকটি কারন সামনে চলে আসে। তারমধ্যে রয়েছে পর্যাপ্ত ক্লাস রুম ও পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব। ফেল করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা যায় গনিত ও ইংরেজি বিষয়ে তারা বেশি ফেল করেছে। ফেল করার জন্য শিক্ষার্থীরা অবশ্য নিজেই অনেকখানি দায়ী, কিন্তু এটা অস্বীকার করা যাবে না যে শ্রেণীতে পাঠদানের কোনো ঘাটতে নেই। শিক্ষার্থীদের ফেল করার জন্য শ্রেনীকক্ষে পাঠদানের অনেক ঘাটতে রয়েছে। অভিজ্ঞ শিক্ষক যে কজন রয়েছে তাদের সকল শ্রেণিতে পরপর ক্লাস নিতে হিমশিম খেতে হয়। এমতাবস্থায় অভিজ্ঞ শিক্ষকদের কয়েকটি শ্রেনীর ক্লাস ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়; ফলস্বরূপ বাংলা শিক্ষকেরও ইংরেজি ক্লাস নিতে হয়। এমনিতেই গ্রামের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরাই পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়, তারপরে এই এলোপাতাড়ি ছন্দহীন পড়াশোনার করার কারনে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় অনেক ঘাটতি থেকে যায়।
এছাড়াও শুকতাইল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের বেহাল দশার প্রধান কারন হলো স্থানীয় রাজনীতির প্রভাব। বিদ্যালয়টি সুন্দরভাবে পরিচালিত করার জন্য প্রতি দু'বছর অন্তরে অন্তরে ম্যানেজিং কমিটি নির্বাচিনের আয়োজন করা হয়। কমিটির সদস্যরা অসাধু উপায় অবলম্বন করে ক্ষমতায় আসে। ফলে অভিজ্ঞ সদস্যরা যায়গা পায়না, অনভিজ্ঞ সদস্য দ্বারা চিয়ার ভরে যায়। আর এই সদস্যদরে ক্ষমতায় আসতে সাহায্য করে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরাই। অভিভাবকরা টাকার লোভে এবং বংশীয় বা পাড়ার ক্ষমতা রক্ষার্থে অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন; তারা তখন ভুলে যায় তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ-এর কথা। এ নির্বাচিত অযোগ্য সদস্যরা তাদের সুবিধামতো বিদ্যালয় পরিচালনা করতে থাকেন। কমিটির সদস্যদের স্থানীয় ক্ষমতার প্রভাবে প্রধান শিক্ষকসহ বিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক কাঠের পুতুল বনে যায়। শিক্ষক নিয়োগ ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগে কমিটির সদস্যদের সম্মতি দেওয়ার সুযোগ থাকার কারণে, তারা যোগ্য প্রার্থীকে মনোনীত না করে, টাকা খেয়ে নিজস্ব প্রার্থীকে মনোনীত করেন। নিয়োগের কাজটা তাদের নিজেদের সর্বসম্মতিক্রমে করা হলে খুব বেশি ঝামেলা হতো না। কিন্তু কি হয়, নিয়োগের সময় কমিটির সদস্যদের আলাদা আলাদা নিজস্ব প্রার্থী থাকে, আর এটা নিয়ে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বেঁধে যায়। কমিটির চারজন সদস্যর প্রধান থাকেন একজন সভাপতি, যিনি কমিটির সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হন। সভাপতিকে বলা যায় টাকার কুমির, তিনি হা করে থাকেন, আর চাকরি প্রার্থীরা স্রোতের টানে তার মুখে ঢুকে যায়। যে পেট ভরাতে পারে, তারই চাকরি মিলে যায় ।
এছাড়াও কমিটির সদস্যরা যে যেভাবে পারে স্কুলের টাকা ও সম্পদ লুট করতে থাকে; বিদ্যালয়ের পড়াশোনা ও অবকাঠামগত উন্নয়ন কিভাবে করা যায় এটা চিন্তা না করে, কমিটির সদস্যরা লুটেপুটে খাওয়া নেশায় মেতে থাকে। কিন্তু আফসোস এগুলো দেখার কেউ নাই। ফলে এভাবে চলতে চলতে ঐতিহ্যবাহী শুকতাইল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়টি আজ ধ্বংস প্রায়। যেখানে ১৯৬৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি একাত্তরের পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর ভারি গোলাবারুদও ধ্বংস করতে পারিনি, সেখানে আজ স্থানীয় রাজনীতি ও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় বিদ্যালয়টি ধ্বংস প্রায়।
তাই গোপালগঞ্জের জেলাপ্রশাসকের কাছে দাবি রইলো শুকতাইল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়াশোনাকে পূর্বের ন্যায় গতিশীল করতে এবং তার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অতিসত্বর ব্যবস্থা নিন। শিক্ষক ও অভিভাবকগন কাছে দাবি, আপনারা শিক্ষার্থীদের প্রতি আরো আন্তরিক । এছাড়াও বর্তমান নবনির্বাচিত ম্যানেজিং কমিটির কাছে সর্বসাধারণের দাবি যে, বিদ্যালয়ের সার্বিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে আপনারা নিজ নিজ দায়িত্ব যায়গা থেকে এগিয়ে আসুন। পুরোনো সমস্ত অবৈধ কাজের বাঁধ ভেঙে, শুকতাইল বিদ্যালয়ের নতুন জীবন দান করতে আপ্রাণ চেষ্টা করুন। আপনারাদের হাত ধরে শুরু হোক শুকতাইল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের রেনেসাঁর যুগ।
৩১২ দিন ১৯ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
৮১৬ দিন ২৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে