◾মোঃ শাহরিয়ার হক নোমান : কৃষি শিক্ষার সম্প্রসারণ, আধুনিকায়ন ও গবেষণা সর্বোপরি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে অভীষ্ট হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক বাস্তবমুখী ও মাঠ পর্যায়ের জ্ঞানকে ত্বরান্বিত করতে প্রতি সেমিস্টারে কোর্স রিলেটেড শিক্ষা সফর বাধ্যতামূলক করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ডঃ আব্দুল বাসেত। তারই ধারাবাহিকতার বিশ্ববিদ্যালয়টির "এনিমেল সাইন্স এন্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন" অনুষদের লেভেল-০১সেমিস্টার-০২ শিক্ষার্থীরা গত ৩০ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি তিন দিনব্যাপী শিক্ষা সফর সফলভাবে সম্পন্ন করেছে।
সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ ডা: সালাউদ্দীন ইউছুপ, প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত), এনাটমি এন্ড হিস্টোলজি বিভাগ, ডা. রহিমা আক্তার দিপা, প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত), ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি এন্ড টক্সিকোলজি বিভাগ, ডা. শিরিনা আক্তার তমা, প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত), অ্যানিমেল সাইন্স বিভাগ, ডা: জাকিয়া সুলতানা কলি, প্রভাষক ও বিভাগীয় প্রধান (ভারপ্রাপ্ত), অ্যানিমেল নিউট্রেশন বিভাগ।
কুয়াশাচ্ছন্ন পূর্ণিমার রাত ৩০ শে জানুয়ারি রাত দশটায় হবিগঞ্জ থেকে যাত্রা শুরু হয় সফরটির। পরবর্তী দিন ভোরে শিক্ষার্থীরা পৌঁছায় " চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস" বিশ্ববিদ্যালয়ে। সফরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীরা শুরুতেই ডাঃ সালাউদ্দীন ইউছুপ স্যারের তত্ত্বাবধানে পরিদর্শন করে এনাটমি মিউজিয়াম। যেখানে প্রায় সকল প্রজাতির প্রাণীর কঙ্কাল, ভিসেরাল অর্গান সহ অনেক ডামি এনিম্যাল ও অর্গান চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা তাদের উদ্দেশ্যে সহজ, সাবলীলভাবে ব্যাখ্যা করেন ডাঃ সালাউদ্দীন ইউছুপ। মিউজিয়াম পরিদর্শন শেষে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনাটমি অ্যান্ড হিস্টোলজি, ফিজিওলজি, ফার্মাকোলজি এন্ড টক্সিকোলজি, এনিমেল সাইন্স এন্ড নিউট্রিশন সহ অন্যান্য ল্যাবরেটরী পরিদর্শন করে। এ সময়ে তারা সংশ্লিষ্ট কোর্স টিচারের দিক নির্দেশনায় ল্যাবের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামাদির প্রয়োজন ও ব্যবহার সম্পর্কে দিকনির্দেশনা ও হাতেকলমে শিক্ষা প্রদান করেন। যা তাদের তাত্তিক পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞানকে আরো সমৃদ্ধ করবে। এছাড়াও তারা ফিশারিজ মিউজিয়াম অবলোকন করে ও ডা. সালাউদ্দীন ল ইউসুপ স্যারের তত্ত্বাবধানে সিভাসু "কাদেরী টিচিং হাসপাতাল" পরিদর্শন করে। এ সময় তারা অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয়কারী যন্ত্র, অপারেশন থিয়েটার, সার্জারি কক্ষ পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাথমিক জ্ঞান লাভ করে। সিভাসু পর্ব শেষ করে পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় প্রাণী পরিদর্শনে বের হয়। এ সময়ে তারা ডাঃ শিরিনা আক্তার তমা ম্যাডামের তত্ত্বাবধানে "পেট, জু, ল্যাব ও ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন" কোর্স অন্তর্ভুক্ত সকল প্রাণী সরেজমিনে প্রত্যক্ষ করে ও প্রাণীদের সম্পর্কে বিস্তারিত সম্মুখ জ্ঞান লাভ করে। এর মাধ্যমে সফরের প্রথম দিনের শিক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়।
সফরের দ্বিতীয় দিন সর্বপ্রথম শিক্ষার্থীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারি পার্ক, ডুলহাজরা পরিদর্শনে বের হয়। এসময় তারা সাফারি পার্কের বিভিন্ন প্রাণীর অবাধ পদচারণা, তাদের স্বভাব বাসস্থান খাদ্যাভ্যাস, খাঁচা সম্পর্কে বাস্তব ধারণা পায়। যা তাদের একাডেমিক সম্পর্কিত পড়াশোনার সহায়ক হবে এবং চিড়িয়াখানা ও সাফারি পার্কের মধ্যে পার্থক্যের পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা ঐদিন পড়ন্ত বিকেলে কক্সবাজারের সি বীচের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করে। এ সময় তারা গল্প ,গান, ঝিনুক কুড়ানো ইত্যাদি কাজেও সময় পার করে। সফরের শেষ দিনও ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দদায়ক। এদিন তারা কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরে দেখে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ইনানী সি বীচ, হিমছড়ি ঝর্ণা, ঝাউবন ইত্যাদি। যা শিক্ষার্থীদের মনকে করবে সমুদ্রের বিশালতার মতই বড় ও ভ্রমণ অনুরাগীদের তৃষ্ণা মিটাবে বলে আশা করা যায়। এভাবেই তিন দিনব্যাপী শিক্ষা সফর সফলভাবে সম্পন্ন হয়।
কবি বলেন,
"ভ্রমণে বাড়ে জ্ঞান, সতেজ হয় প্রাণ
অতৃপ্ততায় তুষ্টি নিয়ে, পুষ্ট হয় জ্ঞান "।
সর্বোপরি শিক্ষা সফর থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান তাদের প্রাত্যহিক ও কর্মমুখী জীবনে কাজে লাগবে ও তাদের জন্য ও শিক্ষণীয় ও আনন্দদায়ক ঘটনার সাক্ষী হয়ে জীবনের সোনালী অতীত হয়ে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ৪ থেকে ৫ বছরের শিক্ষাবর্ষ শেষে একটা ট্যুর পায়, সেখানে হকৃবির মাননীয় উপাচার্য মহোদয় শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি সেমিস্টারের কোর্স কারিকুলামে বিভিন্ন কোর্স রিলেটেড একাডেমিক ট্যুরের ব্যবস্থা রেখেছেন। ফলে, ভিসি স্যারের এমন যুগোপযোগী স্মার্ট চিন্তা চেতনার সুফল পেতে শুরু করছে দেশের অন্যতম নতুন এই সরকারি স্মার্ট পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আশা, এমন স্মার্ট ভিসি স্যারের হাত ধরেই আরো বেশি স্মার্ট হবে হকৃবি এবং এর ধারাবাহিকতা অবদান রাখবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের স্মার্ট বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার লক্ষ্যে।
৩০৪ দিন ৯ ঘন্টা ৪০ মিনিট আগে
৪১৭ দিন ৩ ঘন্টা ১১ মিনিট আগে