মুন্সীগঞ্জের কৃতিসন্তান উপমহাদেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক, সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া ৩ টার দিকে রাজধানীর উত্তরা মহিলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। ফুসফুস সংক্রমণের পর গত ২ অক্টোবর তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। মি. চৌধুরী আগে থেকেই ‘স্কিমিক হার্ট ডিজিজে’ ভুগছিলেন। মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।
আজ রোববার সকাল ১০ টার দিকে মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর স্টেডিয়ামে বদরুদ্দোজা চৌধুরীর তৃতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়েছে । বাদ জোহর গ্রামের বাড়ি মজিদপুর দয়হাটায় চতুর্থ জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে। এর আগে শনিবার সকাল আটটায় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাদ জোহর বারিধারায় ৮ নম্বর সড়কে বায়তুল আতিক জামে মসজিদে তাঁর দ্বিতীয় জানাজা সম্পন্ন হয়
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘জাতি একজন দেশবরেণ্য চিকিৎসক এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় রাজনীতিবিদকে হারালো। আমি তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থান- জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।’ শনিবার (৫ অক্টোবর) প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোক বার্তায় প্রধান উপদেষ্টা বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। ডা. বদরুদ্দোজার জীবন থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে সবাইকে জনগণ ও গণতন্ত্রের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস।
রাজনীতিতে সক্রিয় হবার আগে থেকেই চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতিমান ছিলেন প্রফেসর বি. চৌধুরী। এছাড়াও ভালো ছাত্র এবং উপস্থাপক হিসেবেও পরিচিত ছিলো তার। তার লেখা " নাম বলা নিষেধ, প্রবাসীর মন, দুঃখ সুখের ছেলেবেলা, এবং আমি বলেছিলাম, নায়িকা প্রধান, ডায়াবেটিস এবং জরুরী হোম কেয়ার, জেনে নাও তোমার শরীরটাকে, জেনে নাও কি খাবে ? কেন খাবে ? " বইগুলো সর্বমহলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি এক পুত্র ও দুই কন্যার জনক। তার স্ত্রী হাসিনা ওয়ার্দা চোধুরী একজন গৃহিণী। বড় মেয়ে পেশায় ব্যারিস্টার, ছোট মেয়ে শায়লা চৌধুরী চিকিৎসক। পুত্র মাহি বি. চৌধুরী একজন রাজনীতিবিদ এবং মুন্সিগঞ্জ-১ আসনের তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের অধিকারী প্রফেসর বি. চৌধুরী ১৯৩০ সালের ১১ অক্টোবর কুমিল্লা শহরের সুপরিচিত মুন্সেফবাড়ির নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকার সেন্ট গ্রেগরী হাই স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এবং ব্রিটেনের ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি এডিনবার্গ, লন্ডন ব্রোম্পটন চেস্ট ইন্সটিটিউট, লন্ডনের হ্যামার স্মিথ পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিক্যাল স্কুল থেকে স্নাতকোত্তর চিকিৎসা শিক্ষা গ্রহণ করেন।
অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী এম.বি.বি.এস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন, পরবর্তীতে তিনি একজন 'মেডিসিন বিশেষজ্ঞ' হিসেবে পরিচিত ছিলেন। রাজনীতির বাইরে তিনি চিকিৎসকদের কয়েকটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
'টিউবারকিউলোসিস অ্যান্ড চেস্ট ডিজিজ' নিয়ে বহু আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের হয়ে যোগ দিয়েছেন এবং এ সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মেও তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন।
বাংলাদেশে হেলথ এন্ড ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট নামে তার প্রতিষ্ঠিত একটি ট্রাস্টের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। এই ট্রাস্টের মাধ্যমে দেশের প্রথম মহিলা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি নিজের চেম্বারে নিয়মিত রোগী দেখতেন।
মুন্সীগঞ্জ-১ আসন থেকে তিনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দুইবার জাতীয় সংসদের উপনেতা এবং একবার বিরোধী দলীয় উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০১ সালে তিনি খালেদা জিয়ার সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। এরপর বিএনপির মনোনয়নে ২০০১ সালের ১৪ নভেম্বর বাংলাদেশের ১৫ তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব শুরু করেন।
রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালের ২১ জুন রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন। পরে ২০০৪ সালের ৮ মে বিকল্পধারা বাংলাদেশ নামে একটি রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত দলটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তিনি।
তার পিতা অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী কৃষক প্রজা পার্টির সহ-সভাপতি, যুক্তফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক ও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার মজিদপুর দয়হাটা গ্রামে।
৪৭ দিন ৯ ঘন্টা ১৭ মিনিট আগে
৯৫ দিন ১৪ ঘন্টা ৪৩ মিনিট আগে
১০৩ দিন ২০ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
১৫৬ দিন ১ ঘন্টা ৪৭ মিনিট আগে
১৭৭ দিন ২৩ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
৩১০ দিন ১৯ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
৩২৫ দিন ২০ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
৪০৮ দিন ১৫ ঘন্টা ৩৮ মিনিট আগে