◾ আয়শা সিদ্দিকা
❝যদি তুমি চোখ মেলো বাঙলা সাহিত্যের দিকে, তাহলে দেখবে জ্বলছে হাজার হাজার প্রদীপ; লাল-নীল-সবুজ, আবার কালোও। হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে রচিত হচ্ছে বাঙলা সাহিত্য। এর একেকটি বই প্রদীপের মতো আলো দিয়ে যাচ্ছে।❞(পৃ-৭)
ঠিক তেমনি হুমায়ুন আজাদ রচিত লাল নীল দীপাবলিও প্রতিনিয়ত আমাদেরকে আলোকিত করে যাচ্ছে।
"লাল নীল দীপাবলিকে" লেখকের ও বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই বইটি পাঠ করলে যেমন বাঙালি আর বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ সম্পর্কে জানা যায়, তেমনি বাংলা সাহিত্যের তিন যুগ, সেসময়ের কবি-সাহিত্যিকদের কথাও জানা যায়। হুমায়ুন আজাদ তার লাল নীল দীপাবলিতে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত ফুটিয়ে তুলেছেন। বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ, সাহিত্যের তিন যুগ, সেসব যুগের কবি-সাহিত্যিকদের পরিচয় ও তাদের রচনাবলি সম্পর্কে সবিস্তারে বর্ণনা রয়েছে এই বইতে।
লেখক বইয়ের শুরুতেই বাঙালি, বাঙলা, বাঙলাদেশ শব্দের উৎপত্তি নিয়ে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রক্তের সংমিশ্রণে গড়ে উঠেছে আজকের এই বাঙালি জাতি। সময়ের পরিক্রমায় ভেড্ডা, মঙ্গোলীয়, আর্য, শক, ইংরেজ প্রভৃতি জাতির রক্ত এসে মিশেছে বাঙালিদের দেহে। তাই বাঙালিরা বড়ই বিচিত্র। বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের একমাত্র নিদর্শন চর্যাপদ। এই বইয়ের ভাষা বোঝা কষ্টসাধ্য। অনেকটা দুঃসাধ্যও বটে। তাই একে আলো-আঁধারি ভাষাও বলা হয়। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকাহিনী নিয়ে রচিত বৈষ্ণব পদাবলিকে মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ ফসল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। "এ কবিতাগুলো ক্ষুদ্র; কিন্তু এগুলোতে যে আবেগ প্রকাশিত হয়েছে তা তুলনাহীন।" (পৃ-১৩)
এছাড়াও লেখক তার বইতে চণ্ডীমঙ্গলের কালকেতু-ফুল্লরা, মনসামঙ্গলের দেবী মনসার পুজো প্রচারের কাহিনী অত্যন্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সেসময়ের কিছু বিখ্যাত মুসলমান কবি-সাহিত্যিকের পরিচয় এবং তাদের লেখনীর কথাও উঠে এসেছে লাল নীল দীপাবলিতে।তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: শাহ মুহাম্মদ সগীরের ইউসুফ-জুলেখা, সাবিরিদ খানের হানিফা ও কয়রা পরীর গল্প প্রভৃতি। এছাড়াও আবহমান কাল ধরে গ্রাম-বাংলার সাথে মিশে থাকা লোক-সাহিত্য এবং তাদের সংগ্রাহকদের নাম, কবিয়াল, শায়ের এবং পর্যায়ক্রমে সাহিত্যে গদ্যের আবির্ভাবের কথাও উল্লেখ রয়েছে এই বইতে। প্রাচীন যুগ এবং মধ্যযুগে গদ্য বলতে কিছু ছিল না। সবকিছু পদ্যেই রচিত হতো। আধুনিক কাল থেকে সাহিত্যে গদ্যের সূচনা হয়। বাংলা গদ্যের বিকাশে অসামান্য অবদান রাখেন ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পণ্ডিতেরা। এছাড়াও রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ প্রমুখের প্রচেষ্টায় আধুনিক গদ্যের পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটে। লেখক তার এই বইতে আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ সব নাটক, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ এবং সেসবের রচয়িতাদের নিয়ে চমৎকার আলোচনা করেছেন।
উপস্থাপনাগত কৌশল, সহজ-সাবলীল ভাষার ব্যবহার, তথ্যগত শুদ্ধতা প্রভৃতি সবকিছু মিলিয়ে এক কথায় আমার কাছে বইটি অসাধারণ লেগেছে।
লাল নীল দীপাবলিতে বাংলা সাহিত্যের সুদূর প্রাচীনকাল থেকে আধুনিক কালের বর্ণনা সবিস্তারে পাওয়া যায়। তাই কেউ যদি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান লাভ করতে চায় তবে তার বাংলা ভাষার এই মূল্যবান গ্রন্থটি অবশ্যই পাঠ করা উচিত।
১৫ দিন ১৭ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
১২২ দিন ১৩ ঘন্টা ৪৬ মিনিট আগে
১৫৯ দিন ৪ মিনিট আগে
১৫৯ দিন ১৬ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
১৯৬ দিন ২০ ঘন্টা ৫ মিনিট আগে
২৩০ দিন ২২ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
২৪৯ দিন ২৩ ঘন্টা ২৫ মিনিট আগে
২৬৬ দিন ১৯ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে