রাজশাহীর দারুস সালাম কামিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের পদ নিয়ে চলছে চরম উত্তেজনা। অধ্যক্ষ ড. মোহা. শহীদুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে একদল শিক্ষার্থী সংবাদ সম্মেলন করে তাকে দুর্নীতিবাজ ও অবৈধ বলে অভিযোগ তুলেছেন।
অন্যদিকে অধ্যক্ষের সমর্থকরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করছে, যা মাদ্রাসার শিক্ষার পরিবেশকে নষ্ট করছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে মাদ্রাসার পরিস্থিতি দিন দিন উত্তপ্ত হচ্ছে, এবং এই দ্বন্দ্ব এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ছড়িয়ে পড়েছে।
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করা শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, তিনি ফ্যাসবাদের দালাল ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, এবং মাদ্রাসার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের টাকা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ছাত্রদের সুযোগ-সুবিধা সংকুচিত করেছেন এবং শিক্ষকদের কল্যাণ তহবিলের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন।
এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা চাই না, এমন একজন অধ্যক্ষ আমাদের মাদ্রাসায় থাকুক, যিনি শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতায় থেকে নিজের স্বার্থ হাসিল করছেন এবং রাজনৈতিকভাবে সুবিধাভোগী হয়ে উঠেছেন। শহীদুল ইসলাম আওয়ামী লীগের দোসর। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে মাদ্রাসাকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছেন। তার কারণে আমরা ন্যায়বিচার পাচ্ছি না। আমরা তার পদত্যাগ চাই।
তারা আরও অভিযোগ করেন, শিক্ষকদের কল্যাণ ভাতা ও অবসর-সুবিধা নিয়ে তিনি অনিয়ম করেছেন এবং বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানের অনুদানের টাকা নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছেন
একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী রিদওয়ান সিদ্দিকী ফেসবুকে লিখেছেন, আমার বাবা প্রায় ৩০ বছর এই মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেছেন। অধ্যক্ষ শহীদুল ইসলাম দায়িত্ব নেওয়ার ছয় মাসের মধ্যেই তিনি মারা যান। এরপর আমরা বাবার কল্যাণ ভাতা পাওয়ার জন্য বহুবার তার কাছে গিয়েছি, কিন্তু তিনি আমাদের সাহায্য করেননি। বছরের পর বছর শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে অধ্যক্ষের সমর্থনে থাকা শিক্ষার্থীরা পাল্টা সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করে অধ্যক্ষদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যাতে কেউ দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করতে না পারেন। অধ্যক্ষ শিক্ষার মানোন্নয়ন, শিক্ষকদের কল্যাণ ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল উপাধ্যক্ষ ও কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে তাকে অপসারণের চেষ্টা করছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, অধ্যক্ষ ছুটিতে থাকার সময় উপাধ্যক্ষ ও তার অনুসারীরা মাদ্রাসার পরিবেশ নষ্ট করেছেন এবং তার কক্ষ দখল করেছেন।
অধ্যক্ষের এক সমর্থক শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যক্ষ মহোদয় এই মাদ্রাসার জন্য বহু উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। তিনি শিক্ষার মান বাড়ানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। আমরা চাই তিনি তার দায়িত্ব পালন করুন।
বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও আলোচনার ঝড় বইছে। সেখানে আব্দুল বাশির বাবু লিখেছেন, ‘রাজশাহী দারুস সালাম কামিল মাদ্রাসার সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলীদের জানানো যাচ্ছে যে, অত্র মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের বিষয়ে কোনো শিক্ষক-শিক্ষিকা যদি প্রকাশ্যে কোনো ভূমিকা রাখেন, তাহলে তাদের আমরা দালাল বলে চিহ্নিত করব।’
প্রাক্তন শিক্ষার্থী গোলাম মাসুদ লিখেছেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানটি শান্তির দ্বার হলেও, সব সময় অশান্তি দেখা দেয়। কারণটা কী? তারপরও একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, আমি একজন প্রাক্তন ছাত্র তাই খুব ব্যথিত হই।’
মাদ্রাসায় উত্তেজনা, শিক্ষার্থীরা দুই দলে বিভক্ত।
বর্তমানে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক পক্ষ অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে স্মারকলিপি দিচ্ছে। অন্য পক্ষ অধ্যক্ষকে বহাল রাখার জন্য স্মারকলিপি দিচ্ছে। এই বিতর্ক শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, শিক্ষকরাও দুই দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। ফেসবুকে উত্তপ্ত বিতর্ক, অনলাইনেও সংঘাত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই বিতর্ক আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
শিক্ষার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে পোস্ট দিচ্ছে, যা দিন দিন আরও উত্তপ্ত হচ্ছে। অনেকে অধ্যক্ষের পক্ষে পোস্ট দিচ্ছেন, আবার অনেকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পোস্ট করছেন। শিক্ষকরাও সরাসরি ফেসবুকে মতামত দিচ্ছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই দ্বন্দ্ব এখন মাদ্রাসার ভবিষ্যৎকেও অনিশ্চিত করে তুলেছে। কর্তৃপক্ষ কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংকট নিরসনের সম্ভাবনা নেই।
১১ দিন ২ মিনিট আগে
১১ দিন ২৩ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
১৩ দিন ১৩ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
১৪ দিন ১৪ ঘন্টা ৫১ মিনিট আগে
১৫ দিন ২৩ ঘন্টা ৪২ মিনিট আগে
২০ দিন ৩ ঘন্টা ২৭ মিনিট আগে
২০ দিন ৯ ঘন্টা ৪৮ মিনিট আগে
২০ দিন ১৩ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে