◾ইশরাত ইশা || রমজান আত্মশুদ্ধির মাস। এই মাসে মুসলিমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় রোজা পালন করেন। তবে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা এবং পানাহার থেকে বিরত থাকার কারণে অনেকেরই শরীরে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন) ও ক্লান্তি দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে গরমের দিনে রোজা রাখলে এই সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তাই রোজায় সুস্থ ও সতেজ থাকতে হলে কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি।
রমজান আত্মশুদ্ধি, সংযম ও ধৈর্যের মাস। এই মাসে মুসলিমরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মগঠন ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করেন। তবে দিনের দীর্ঘ সময় পানাহার থাকার ফলে অনেকেরই শরীরে পানিশূন্যতা, ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। রোজায় সুস্থ ও সতেজ থাকতে হলে সচেতনভাবে কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি।
রোজায় শরীরের পানির ভারসাম্য বজায় রাখা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সারাদিন রোজা রাখার ফলে শরীর থেকে প্রচুর পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায়, যা পুনরায় পূরণ করা না হলে ক্লান্তি ও দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। ইফতার থেকে সাহরি পর্যন্ত অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। একবারে বেশি পানি না খেয়ে ধীরে ধীরে খান, যেন শরীর সহজে শোষণ করতে পারে।
অতিরিক্ত চা, কফি ও সফট ড্রিংকস পান থেকে বিরত থাকুন। এগুলো শরীর থেকে বেশি পানি বের করে দেয়, ফলে পানিশূন্যতা বাড়তে পারে। ডাবের পানি, লেবুর শরবত ও স্যালাইনযুক্ত পানীয় পান করা ভালো, কারণ এগুলো শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
শরীরকে চাঙা ও সক্রিয় রাখতে সঠিক খাবার নির্বাচন করা খুব জরুরি। অনেকেই ইফতারে ভারী ও তৈলাক্ত খাবার বেশি খান, যা হজমে সমস্যা তৈরি করে এবং ক্লান্তি বাড়িয়ে দেয়। সাহরিতে ধীরে হজম হয় এমন খাবার খান, যেমন- ওটস, শাকসবজি, ডাল, ব্রাউন রাইস, ডিম ও বাদাম। এসব খাবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে ও শক্তি জোগায়। ইফতার হালকা ও পুষ্টিকর করুন। খেজুর, ফল, স্যুপ, দই ও শাকসবজি রাখুন। এতে শরীরে দ্রুত শক্তি ফিরে আসবে। ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তেলযুক্ত খাবার কম খান। এগুলো হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে ও শরীরকে আরও ক্লান্ত করে তোলে। ইফতারের পর প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (মাছ, মুরগি, ডাল) ও ফাইবারযুক্ত খাবার (সবজি, ফল) রাখলে শরীর দীর্ঘক্ষণ কর্মক্ষম থাকবে।
অনেকেই রমজানে রাত জেগে ইবাদত বা অন্যান্য কাজে ব্যস্ত থাকেন এবং যথেষ্ট ঘুমান না। ফলে শরীরে ক্লান্তি ভর করে, যা সারাদিন রোজা রাখা আরও কঠিন করে তোলে। রাতে ৬-৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। সাহরির পর ২০-৩০ মিনিটের একটি ছোট ঘুম নিলে দিনের বেলায় কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায়। দিনের মধ্যে ১৫-২০ মিনিটের পাওয়ার ন্যাপ (সংক্ষিপ্ত বিশ্রাম) নিলে ক্লান্তি দূর হয় এবং মনোযোগ বাড়ে।
গরমের মধ্যে রোজা রাখলে পানিশূন্যতা ও ক্লান্তির সম্ভাবনা বেশি থাকে। দুপুরের দিকে রোদে বের হওয়া এড়িয়ে চলুন। বাইরে গেলে ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করুন। শারীরিক পরিশ্রম কমিয়ে দিন, বিশেষ করে দুপুর ও বিকেলের দিকে। সম্ভব হলে ঠাণ্ডা পরিবেশে থাকার চেষ্টা করুন।
অনেকেই রোজার সময় ব্যায়াম করা বাদ দিয়ে দেন, কিন্তু হালকা ব্যায়াম শরীরকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে। ইফতারের পর হালকা হাঁটাহাঁটি বা স্ট্রেচিং করলে খাবার ভালো হজম হয় এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায়। ভারী ব্যায়াম বা অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে শরীরে পানির ঘাটতি হতে পারে।
ঘরে বসে ইয়োগা বা হালকা ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম করলে শরীর ঝরঝরে থাকে।
রোজায় সুস্থ ও সতেজ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পানি পান, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ, পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি গরমের প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করা ও হালকা শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে কর্মক্ষম থাকা সম্ভব। সামান্য কিছু নিয়ম মেনে চললে রোজার সময়ও আপনি চাঙা ও প্রাণবন্ত থাকতে পারবেন।
◾ইশরাত ইশা
শিক্ষার্থী, মার্কেটিং বিভাগ
রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী
১১ দিন ৩ মিনিট আগে
১১ দিন ২৩ ঘন্টা ৪৫ মিনিট আগে
১৩ দিন ১৩ ঘন্টা ২৪ মিনিট আগে
১৪ দিন ১৪ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
১৫ দিন ২৩ ঘন্টা ৪৪ মিনিট আগে
২০ দিন ৩ ঘন্টা ২৮ মিনিট আগে
২০ দিন ৯ ঘন্টা ৪৯ মিনিট আগে
২০ দিন ১৩ ঘন্টা ১৫ মিনিট আগে