বাবা-মার স্বপ্নে রাঙানো ঘর আলোকিত করেছিলো খাদিজা। সেদিন তার আগমনে মা'র আঁখিকোণে আনন্দের অশ্রু জমেছিলো খানিক। কতো মায়া, স্বপন আর বুকভরা আশায় দিন কাটছিলো মেয়ের জন্মের। ঘুম ভাঙার বেশ আগেই সূর্যির দেখা মিলে। হয়তো সেটাই কালো কাল বয়ে এনেছিলো খাদিজার জিবনে!
সে যে আরো একযুগ আগের ঘটনা: সময়ের মাসকয়েক আগেই দেখে পৃথিবীর মুখ। সব শিশুর মতো খাদিজার ঠোঁটজোড়াতেও ছিলো হৃদয়কাড়া হাসি। ছিলো চোখের পাতায় মায়াভরা অবাক চাহনি। মা-বাবা'র ঘরে তখন চলছিলো আনন্দের মিলনমেলা।
কিন্তু, কল্পনাতেও কেউ ভাবেনি আসলে তাদের আদরের খাদিজা দৃষ্টিশক্তি হীন! এ মায়াবী চাহনির আড়ালে রয়েছে দীর্ঘ এক অসহায়ত্বের ছায়া। রয়েছে মা আর বাবা'র লালিত স্বপ্ন ভেঙে যাওয়ার এক করুণ সত্য...!
শুরু হয় ছোট্ট মেয়ে খাদিজার চোখের চিকিৎসা। জিবনের সবটুকু দিয়ে হলেও যদি পৃথিবীর আলো তার ভাগ্যে জুটে; এ প্রত্যয় নিয়ে বাবা-মা'র আশাভরা চোখ নিয়ে ছুটোছুটি। এ চিকিৎসক ছেড়ে ঐ চিকিৎসক। ডক্টরের দরজা থেকে হন্য হয়ে ছুটেছে অন্য ডক্টরের খোঁজে! আশার হাত বড্ড লম্বা! তাই তো দেশ ছেড়ে বিদেশের মাটিতে পাড়ি জমান এ বাবা-মা; তবুও যদি কলিজা ছেঁড়া এ রত্নের চোখে এক পলক আলো জুটে!
কিন্তু না; সব আশায় যেন বৃথার দ্বারপ্রান্তে। চিকিৎসকরা শত চেষ্টা করেও ব্যর্থতার চরম সত্য শুনিয়েছে! বুকভাঙা ব্যথা আর ছলছল জলে ভেজা আচল গুটিয়ে মা তার মেয়েকে নিয়ে ফিরে দেশের মাটিতে!
রবে'র কাছে হাত উঠিয়ে আর সিজদাহ্তে লুটিয়ে পরে কান্না করা খাদিজার মা'র নিত্য কাজ হয়ে উঠে! তবুও যদি মেয়ের দৃষ্টি ফিরে আসে...!
এভাবেই কেটে গেলো আরো দীর্ঘ নয়টি বছর। মা'র মনে এখন উঁকিঝুঁকি, মেয়েকে কি পড়াবে? কে পড়াবে? কোথায় পড়াবে? কা'বার মালিক হয়তোবা তার কালামের বিনিময়ে রত্নকে দৃষ্টিশক্তি দান করবেন; তাই দৃঢ়ৃমনে স্থির করলেন, মেয়েকে কুরআনুল কারিমের হাফেজাহ্ বানাবেন। চোখে স্বপ্নবুনে বের হয়ে গেলেন মাদরাসার খোঁজে। প্রতিষ্ঠানের দুয়ারে দুয়ারে এ অসহায় মা অনেক ঘুরেছে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস; কোথাও মেয়েকে নিয়ে নিজের মনের স্বপ্ন বুনতে কেউ রাজি হয়নি!
শেষ অবদি খাদিজার মা'র স্বপ্ন মেয়েকে হাফেজাহ্ বানানোর শুরু দায়িত্ব তুলে নেয়, কুমিল্লা, লালমাই উপজেলাধীন বাগমারা 'আল ইসরা মাদরাসা'।
'ইসরা' কাননে খাদিজার হাফেজাহ্ হওয়ার নতুন দিগন্ত শুরু হয়। মাদরাসার অধ্যক্ষ, মাও 'মাসুম বিল্লাহ মুহাজির' সাহেব সানন্দে খাদিজার মা'র স্বপ্নকে নিজের স্বপ্নে অঙ্কিত করেন! ঠিক করা হয় তার জন্য পরিশ্রমী শিক্ষক। দিনরাত অক্লান্ত মেহনতে তিলেতিলে খাদিজাকে হাফেজাহ্'র পথে হাত ধরে এগিয়ে দিয়েছেন, 'আল ইসরা'রই সুনামধন্য শিক্ষক, মাও 'শাহপরান' সাহেব। তাঁর সহপাঠী ও অন্যান্য শিক্ষকদের পরিশ্রম অতূলনীয়।
এ তো সেদিন বছর পূর্ণ হলো; আক্ষরিক জ্ঞান থেকে শুরু করে এখন সে ৭ পাড়ার মতো হিফ্জ সম্পূর্ণ করেছে! সংবাদ শুনে আনন্দে ছুটে আসে, লালমাই উপজেলাধীন 'বসুন্ধরা শুভসংঘ' সংগঠন। কুরআনুল কারিম আর প্রয়োজনীয় উপহারাদি দিয়ে চেষ্টা করে খাদিজার মুখে একটু হাসি ফুটাতে। হাসি আর কান্না মিশ্রিত ক্ষীণ কন্ঠে খাদিজা বলে উঠে, 'আমি চাই কুরআনের হাফেজাহ্ হতে। সে জন্যে অন্তত একটি চোখ দিয়ে হলেও যেন আল্লাহ তায়া’লা আমাকে তাঁর কুরআন দেখার তৌফিক দেন। আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।'
এ সময় দৈনিক 'কালের কন্ঠ' কুমিল্লা সদর দক্ষিণ ও লালমাই উপজেলার প্রতিনিধি, জনাব 'জহিরুল ইসলাম' ও 'আল ইসরা মাদরাসা'র অধ্যক্ষ মাও 'মাসুম বিল্লাহ মুহাজির' সাহেব সকলের কাছে খাদিজার জন্য দোয়া চান, যেন আল্লাহ তায়া’লা তাকে কুরআনুল কারিমের হাফেজাহ্ হিসেবে কবুল করেন এবং তার দৃষ্টিশক্তি দান করেন।
✍️মুদ্দাসির বিল্লাহ
৫ দিন ৮ ঘন্টা ২১ মিনিট আগে
২৩ দিন ৫ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
২৮ দিন ১৩ ঘন্টা ১৩ মিনিট আগে
৩০ দিন ১৬ ঘন্টা ৫৯ মিনিট আগে
৪৬ দিন ৯ ঘন্টা ৫০ মিনিট আগে
৪৬ দিন ১০ ঘন্টা ০ মিনিট আগে
৬৪ দিন ১২ ঘন্টা ৩৭ মিনিট আগে
৯৮ দিন ১৬ ঘন্টা ১২ মিনিট আগে