ও আর হ্যাঁ মা, সাথে এও বলো, আমি আছিয়া বলছি...!
জানো তুমি মা!
আমার জন্ম তোমার বুকে।
ঐ যে ঐখানে আমার জন্ম;
যেথায় ভাঙা বেড়ার ফাঁকে সূর্যির কিরণ ছড়ায়।
পাশে থাকা পঁচা পাঠ ভড়া ডোবার গন্ধে ছেয়ে যায়;
সে-যে মা-গো অজপাড়াগাঁয়ের হতদরিদ্রের মেয়ে তুমি,
তোমার কি আর ভাগ্যে সাজে সজ্জিত করবে তোমার মেয়ে'!
সে আ__র থাক; ভাগ্যলিপি সেতো তুমি হাসি মুখেই বরণ করেছিলে!
দুমুঠো ডাল আর ভাত মেয়ের মুখে তুলে দিবে বলে দিনের পর দিন কাটিয়েছো পড়সিবাড়িতে!
সাড়ি, গহনাগাঁটি আর হাতের বালা; সে না হয় শোভা পাক উঁচু বাড়ির মাসি মাদের হাতে!
তোমার যে ভাগ্যলিখন চিরসত্য; চাইলেও কি আর তা মুছা যায়?
আচ্ছা, মা! তবুও কি তুমি কখনও তোমার মেয়ের মুখে বিষণ্নতার ছাপ দেখতে চেয়েছিলে?
চেয়েছিলে কি দেখতে?- তোমার মেয়ের বিভৎস করে দেওয়া ছেঁড়াফাঁড়া এক নিথর দেহ...!
জানি, মা তুমি আজ নির্বাক!
ছলছল আঁখিজলে আজ তোমার আঁচল ভেজা।
বুকে চেপে থাকা প্রশ্নেরা তোমায় খুঁড়েখুঁড়ে খাচ্ছে।
কিন্তু তোমার এ ভূমি; সে তো তোমার মাতৃভূমি!
তোমার মায়ের মাটি সে কি জবাব দিবে, বলো নাগো মা! চুপচাপ তোমার মায়ের মাটি তোমার নারিছেঁড়া রত্ন মেয়ের তপ্ত রক্তে ভেজে চুপচুপে!
জানো, মা! তোমার মেয়ের তপ্ত রক্ত সেথায় শুকিয়ে গেছে। কেউ হয়তো কাছেও যায়না। কেন জানো?
হা-হা-হা...! সেখান থেকে গন্ধ আসছে। রক্তে ভেজা মাটিপঁচা গন্ধ!
এটা তোমার মায়ের মাটি।
তোমার জন্মভূমি।
মাতৃভূমি।
আঁচল পেতে স্বামী আর আমার ভাইয়ের জিবন বিলিয়ে যে মাটির স্বাধীনতা কেঁড়ে এনেছিলে;
মুক্ত স্বাধীনতা। তোমার স্বাধীনতা। তোমার মেয়ে আছিয়ার স্বাধীনতা।
তুমি হয়তো স্বপ্ন বুনেছিলে, এ মাটিতে আমার মেয়ে আমার হয়ে বাঁচবে; কিন্তু দেখেছো মাগো, এই মাটি তোমার মেয়ের রক্তচোষা খেগো।
মা! ও মা!
আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছে!
কষ্ট হচ্ছে হায়নাদের থাবায় ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া ছোট্ট দেহটা নড়াতে!
লজ্জা হওয়ার আগেই মাগো আমার মুখে লজ্জা মেখে দিলো!
এ লজ্জা নিয়ে এ মুখ যে আর দেখাতে মন চায় না;
তাই তো দেখো না মা, দু-তিন দিন হয়ে গেলো তবুও চোখ খোলে তাকাইনি!
মা, আমার দিব্যি মনে আছে, বুবুকে যখন বিয়ে দাও তখন খুব ভাতের অভাব ছিলো। বাবা যখন অসুস্থতার চাদর গায়ে তখন তুমি বুবুর সুখের খোঁজে হাত পেতেছিলে তোমার মাটির মানুষের দুয়ারে-দুয়ারে।
বুবুকে সেদিন তোমার ঘাম মাখা টাকায় সাজিয়েছিলে।
সজ্জিত করেছিলে বুবুর হবু বরকে। যেথায় বুবুর শশুরবাড়ি সেথায় তুমি দিয়েছিলে নামিদামি গাড়িবাড়ি; ঘাম শেষে যেন রক্তবেঁচা টাকায়!
মা-গো তুমি আমার হাতটি ধরে বলেছিলে, হাসি ছিলো বেস তোমার মুখে 'ওরে আছিয়া! এ তুর আরেক বাপ। বাপ ডাকলে পরে হোদায় কিনে দিবেয়ানে!'
জানো, মা তোমার মেয়ে সত্যি সেদিন বাবার আসনেই বসিয়েছিলো। অবুঝ মনে বাবার চেহেরা অঙ্কন করেছিলো...!
কিন্তু তোমার এ ছোট্ট আছিয়ার ভাগ্য বছর ৮ থাকতেই পঁচন ধরেছে! বাবার মুখোশে লজ্জার আগেই লজ্জা কেঁড়েছে।
ভুলে গেছো মা?
ঐ যে বুবুর বিয়ের দিন;
আমার হাত টেনে বুবুর বরের কাছে গিয়ে বলছিলে, 'আছিয়া এ তোগো বড় ভাই। বাবা, এ তোমারে ভাই বলে ডাকবোয়েনে।'
অবুঝ তোমার মেয়ে আছিয়া বড় ভাই বলেই বিশ্বাসে গেঁথেছিলো। ভাইয়ের স্নেহ বড্ড আশা করেছিলো!
কিন্তু দেখেছো মা?
তোমার এ ছোট্ট মেয়ের মন আর ছোট্ট দেহে বিষাদের বিষ ঢেলেছে!
যে বিষ আমায় আমাকে আমার শরীর নড়াতে দিচ্ছে না! এ বিষাদ তোমার মেয়ের চোখ খোলতে দিচ্ছে না!
লজ্জা আর কালো অধ্যায় মা-গো তোমার আছিয়াকে হাসপাতালের বেডের সাদা কাপড়ে গুটিয়ে রাখছে।
মা, সত্যি তুমি জানো?__ বেঁচেও যদি যায় তবুও মা তুমি দেখবে, নিত্যদিনের খেলার ছোটছোট বান্ধবীদের সাথে খেলতে গেলেও তোমার মাটির মানুষেরা তাদের ছোট মেয়েদেরকে আমার থেকে দূরে রাখবে।
তুমি মা এ সত্যকে কখনও অস্বীকার করতে পারবে না! তোমার মাতৃভূমির মানুষ এমনই....!
আচ্ছা, মা! মা-গো!
বড্ড কষ্ট হচ্ছে আমার!
হায়নাদের আঁচড় আমার গায়ে খুব খু-ব যন্ত্রণা দিচ্ছে।
তবুও বলি, মা! তোমার মাতৃভূমির বাকি মেয়েদের দেহে মানুষের মুখোশধারী পিশাচের আঁচড় লাগতে দিও না! এ যে শুধু বেঁচে থাকার নামান্তরের পিছনে কালো আরো একটা দীর্ঘ অধ্যায় রয়েছে। তোমার দেশের মানুষকে বলে দিও, তোমার মেয়েদেরকে মা-গো যেন লজ্জার আগেই লজ্জা আর বিষ ঢেলে না দেয়!
ও আর হ্যাঁ মা, সাথে এও বলো, আমি আছিয়া বলছি...!
✍️মুদ্দাসির বিল্লাহ
৫ দিন ৮ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
২৩ দিন ৫ ঘন্টা ২২ মিনিট আগে
২৮ দিন ১৩ ঘন্টা ১৬ মিনিট আগে
৩০ দিন ১৭ ঘন্টা ১ মিনিট আগে
৪৬ দিন ৯ ঘন্টা ৫২ মিনিট আগে
৪৬ দিন ১০ ঘন্টা ২ মিনিট আগে
৬৪ দিন ১২ ঘন্টা ৩৯ মিনিট আগে
৯৮ দিন ১৬ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে