অদক্ষ চালক ও সড়ক ডিভাইডার না থাকায় বিদায়ী ২০২৩ সালে হাটহাজারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীদের জাতীয় ও লোকাল দৈনিক পত্রিকা এবং নিসচার সূত্রে জানা যায়, হাটহাজারী-নাজিরহাট মহাসড়কে বিদায়ী ২০২৩ সালের জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারমধ্যে সবচেয়ে হাটহাজারী থেকে নাজিরহাট মহাসড়কে এ দুর্ঘটনার সংখ্যা বেশি।
নাজিরহাট ও রাউজান হাইওয়ে থানা পুলিশ এবং নিসচা জানায়, গেলো বছর চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি ও চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে ছোট-বড় ৪০ টির বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ২২ জন নিহত ও ৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
নিসচা ও নাজিরহাট হাইওয়ে পুলিশ জানায়, এক বছর আগে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের হাটহাজারী-নাজিরহাট আঞ্চলিক সড়কটি তিন লেনে সম্প্রসারণের কাজ শেষ হওয়ার পর দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের চারিয়া ইজতেমা মাঠের সামনে, চারিয়া বোর্ড স্কুল, মুছার দোকান, সরকারহাট কালীবাড়ি, বালুরটাল, মুনিয়া পুকুর পাড়, নূর আলী মিয়ার হাট, মুন্সীর মসজিদ, হাটহাজারী হাসপাতাল গেট, ধোপার দিঘির পাড়, নন্দির হাট উল্লেখযোগ্য।
রাউজান হাইওয়ে পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম-রাঙামাটি মহাসড়কের ইছাপুর, নাপিতের ঘাটা, সুবেদার পুকুর পাড় এবং চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কে নজুমিয়া হাট, কুয়াইশ কলেজ গেট, ভরা পুকুর পাড় এলাকার আশপাশে বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) এর হাটহাজারী উপজেলা শাখার সভাপতি ওজাইর আহমদ হামিদি বলেন, বিদায়ী ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। তার মুল কারণ হলো অদক্ষ চালক, রিকশা ছেড়ে সিএনজি গাড়ি চালানো, বাইরে অঞ্চলের লোকজন দিনমজুরের কাজ করতে এসেছে তারাও এখন সিএনজি গাড়ি চালায়, ফিটনেস ও ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই এমন গাড়ি চলছে। যার কারণে বেপরোয়া গতির গাড়ি চালাতে গিয়ে মৃত্যুর মতো বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও যারা দূর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছেন তারাও কোন সুরাহা পাচ্ছে না। ক্ষতিপূরণ দেওয়া তো দূরের কথা উল্টো পরিবহন শ্রমিক নেতারা দাপট দেখিয়ে থানা পুলিশকে মামলা নিতে দিচ্ছে না। এমনকি মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করে। মোটকথা বাস-ট্রাক শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের মাস্তানির কারণে সড়কে গাড়ি চলাচলের শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না। অন্য দিকে ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের মাসোহারার কারণে অদক্ষ চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য বছরের তুলনায় বিদায়ী ২০২৩ সালে সবচেয়ে দূর্ঘটনায় বেশি মৃত্যু হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা নিরাপদ সড়ক চাই হাটহাজারী উপজেলা শাখার সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের তিন পরিবারকে দুটো ছাগল এবং ১টি প্যাডেল রিকশা উপহার হিসেবে দিয়েছি।
নাজিরহাট অটোরিকশা চালক সমিতির সভাপতি মাসুদ রানা বলেন, চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কের নাজিরহাট থেকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডে পর্যন্ত সড়কটির ডিভাইডার না থাকার কারণে বেপরোয়া গতির ট্রাক ও বাসের চালকদের অদক্ষতার বলির পাঁঠা সিএনজি গাড়ি। দেশ যতই ডিজিটাল হচ্ছে ততই সাধারণ মানুষের তথা দিনমজুরদের কাজের পরিধি কমে যাচ্ছে। তাছাড়া প্রবাস থেকে দেশে অনেক মানুষ চলে এসেছে। এখন তাদের একমাত্র উপার্জন হল সিএনজি গাড়ি চালানো ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
চট্টগ্রাম আন্ত: জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ ইলিয়াস বলেন, অদক্ষ ও বেপরোয়া গতির চালকদের জন্য নয়, সড়ক ডিভাইডার না থাকায় হাটহাজারী-নাজিরহাট মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। আমরা সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনায় কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করি না। বরং হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ডে যানজট নিরসনে আমাদের সংগঠন থেকে একজন লাইনম্যান দিয়ে যানজট নিরসনের কাজ করেছি। তবে এখানে সবচেয়ে দায়িত্বহীন ভুমিকায় ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশের।
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সম্পাদক মো. শাহজাহান বলেন, আমরা দূর্ঘটনায় কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করি না। তবে এ সব দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশ। তারা যদি দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করে তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা কিছুটা হলেও ফিরে আসবে।
তিনি আরও বলেন, অটোরিকশার চালকদের মধ্যে বেশির ভাগের লাইসেন্স নাই, ট্রাফিক নিয়ম নিয়ে তাঁদের কোনো ধারণা নেই। মহাসড়ককে তিন লেন থেকে চার লেনে প্রশস্ত করে ডিভাইডার দিলে দুর্ঘটনা অনেকটাই কমে আসবে।’
হাটহাজারীর প্রবীণ সাংবাদিক ও অবসরপ্রাপ্ত সাবেক প্রধান শিক্ষক মোঃ আতাউর রহমান মিয়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এসএম মুর্শিদ উল আলম, কাটিরহাট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম এবং হাটহাজারী সাংবাদিক ঐক্য পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আলীসহ অনেকেই জানান, হাটহাজারী-নাজিরহাট মহাসড়ক যেন মৃত্যুকোপে পরিণত হয়েছে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, ছাত্র, ব্যাংকার ও সাধারণ মানুষ। এসব দুর্ঘটনার কারণ সংশ্লিষ্টদের জানা থাকলেও তাঁরা এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বিশেষ করে এই মহাসড়কে ডিভাইডার দেয়া একান্ত জরুরি। যা নিয়ে ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হয়েছে ডিভাইডার।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান জানান, ‘গত সপ্তাহেও মহাসড়কে অতিরিক্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশা মালিক ও বাস মালিকসহ শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সড়ক প্রশাসনের কঠোর তদারকি, যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়াসহ সচেতনতায় কাজ করা হচ্ছে।' নাজিরহাট হাইওয়ে থানার ওসি আদিল মাহমুদ জানান, হাটহাজারী থেকে নাজিরহাট মহাসড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হলো সড়ক ডিভাইডার। এছাড়া কিছু বেপরোয়া গতির চালকদের কারণেও এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। হাটহাজারীর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বখতিয়ার বলেন, ‘নাজিরহাট থেকে হাটহাজারী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটে চালকদের গাফিলতি এবং সড়ক ডিভাইডার না থাকার কারণে। কাজেই এই ব্যস্ততম মহাসড়ককে তিন লেন থেকে ৪ লেনে উন্নীত করলে সড়ক ডিভাইডার হবে। এতে করে সড়কে শৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে। এর পরও যাত্রী ও চালকদের সতর্ক এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।'
৪২৪ দিন ১৭ ঘন্টা ৩৬ মিনিট আগে
৪৩১ দিন ১৬ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
৪৩৬ দিন ১৯ ঘন্টা ১৪ মিনিট আগে
৪৩৭ দিন ১৮ ঘন্টা ২৩ মিনিট আগে
৪৪৩ দিন ২৩ ঘন্টা ৫৮ মিনিট আগে
৪৪৮ দিন ১৮ ঘন্টা ৩০ মিনিট আগে
৪৪৯ দিন ১৩ ঘন্টা ১৯ মিনিট আগে
৪৫০ দিন ১২ ঘন্টা ৫৪ মিনিট আগে